সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯ ১৩:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২২ বার।

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ মোড়ের অবরোধ তুলে নেন তারা।

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। কিন্ত প্রশাসন তাদের দাবির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা পুনরায় আন্দোলন শুরু করেছেন।

আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবি হলো- চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিল করা; দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা এবং ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’ কমিটির মুখপাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল মিয়া বলেন, তারা চারটি দাবি নিয়ে এর আগে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেননি। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, বুধবারের মতো আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এর সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বৃহস্পতিবার ১১টায় আবার আন্দোলন হবে বলে জানান তিনি।

কমিটির আহ্বায়ক আকাশ হোসেন আবিদ বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের কারণে তাদের বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় সংকট এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে এর থেকে পরিত্রাণ চান।

এর আগে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে জমায়েত হতে শুরু করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রথমে টিএসসি মোড় অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটা অংশ বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন এবং সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে ওই এলাকায় সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সাত কলেজের কারণে তাদের মাঝে মাঝে পরিচয় সঙ্কটে পড়তে হয়। অনেকে জিজ্ঞাসা করে তারা ঢাবির কোন শাখায় পড়েন। এটা তাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক এবং হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মতো। ঢাকা কলেজ থেকে শুরু করে অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিনোদনস্থল এবং মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করে।

তারা জানান, প্রাশাসনিক কাজ করার জন্য ঢাবির রেজিস্টার ভবন নিজেদের জন্যই যথেষ্ট না। সেখানে সাত কলেজের অন্তর্ভূক্তিকে বলা চলে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’।

তারা বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা কঠোর অবস্থান চালিয়ে যাবেন। প্রশাসন কেন তাদের কথা না শুনে সাত কলেজের প্রতি এতো ‘প্রেম’ দেখাচ্ছে সেটাই বোধগম্য নয়। প্রশাসনকে অনেকবার এই ব্যাপারে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো কথা কানেই নিচ্ছেন না। ডাকসু শুধু আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু কোনো কাজ করছে না।

অবরোধের সময় আন্দোলনকারীরা অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ‘শোন বোন শোন ভাই, ঢাবির কোন শাখা নাই’, ‘ঢাবির বাস আটকা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আশ্বাস বা প্রতারণা, চলবে না চলবে না’, ‘সাত কলেজের ঠিকানা, ঢাবি হবে না’, ‘রাখতে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগে যান ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

সেখানে তিনি বলেন, তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন, এখনও এরসঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে পর্যাপ্ত সেবা পায় না, তাদের রেজাল্টের জন্য ৭ থেকে ৮ মাস অপেক্ষা করতে হয় অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্যদের দায়িত্ব নেন। প্রশাসন শিক্ষার মানের কথা বলেন, কেমন মান বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন।

প্রশাসেনর উদ্দেশে আখতার বলেন, তাদের পরিচয় হুমকির মুখে রয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্যও অসংখ্য অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন করেছে। এসময় তিনি এর দ্রুত সমাধান দাবি করেন।