ধুনটে বন্যায় সড়ক ভেঙ্গে দ্বি-খন্ডিত যমুনার পানি চুয়ে বাঁধ ভাঙার শঙ্কা

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. ধুনট (বগুড়া)
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯ ১৪:৩৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭১৯ বার।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার বন্যার পানির প্রবল স্রােতে যমুনা নদীর সহরবাড়ী ঘাট সড়ক ভেঙ্গে দ্বি-খন্ডিত হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় সড়কটির প্রায় ১০০ মিটার এলাকা পানির স্রােতে ধসে যায়। এদিকে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় শতাধিক স্থানে ইঁদুরের গর্তদিয়ে পশ্চিম তীরে পানি চুয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এরমধ্যে আটাচর গ্রামে বাঁধের পশ্চিম অংশে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা দেবে গেছে। ওই এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতংক দেখা দিয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গত শুক্রবার রাত থেকে ধুনট উপজেলায় যুমনা নদীর তীর উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের অভ্যন্তরের গ্রাম গুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। গত ৫ দিনে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার দুপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর ৩টি চরসহ অন্তত ১০টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৭০ হেক্টর আবাদী জমি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় কৃষকের পাট, ধানের বীজতলা, শাক-সবজি, আখ, মরিচসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাধানগর চরে ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হয়েছে অন্তত ৩০টি পরিবার। বন্যা কবলিত এলাকায় সাপের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি, জরুরী মেডিসিন এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। বৃষ্টিতে গবাদী প্রাণি নিয়ে বাঁধে আশ্রিত পরিবার গুলো চরম দুর্ভোগে রয়েছে। 

এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গোসাইবাড়ী-সহরাবাড়ী ঘাট সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা পানির স্রােতে ধসে গেছে। এতে সড়কটি দ্বি-খন্ডিত হওয়ায় নৌ-ঘাট সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধসে যাওয়া যাওয়া স্থান দিয়ে প্রবল বেগে সহরাবাড়ী গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। এতে সহরাবাড়ী গ্রামের কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 

অন্যদিকে ধুনট উপজেলায় ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ঈঁদুরের গর্তদিয়ে যমুনার পানি লোকালয়ে চুয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পানি প্রবেশ প্রতিরোধ করতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান গুলোতে। এদিকে বুধবার সকাল থেকে আটাচর গ্রামে প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় অন্তত ৩০টি স্থানে পানি চুয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরমধ্যে সিরাজ উদ্দিনের বাড়ির নিকট বাঁধের ১০০মিটার এলাকা দেবে যাওয়ায় আতংক দেখা দেয়। আতংকিত পরিবার গুলো বাঁধ ভাঙ্গার আশংকায় ঘরবাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন। এদিকে বালু-মাটির তৈরী বাঁধের অধিকাংশ স্থানে ঈঁদুরের গর্তদিয়ে পানি চুয়ে প্রবেশ করার ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে বাঁধ ভাঙ্গার আশংকা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বালু-মাটির তৈরী সহরাবাড়ী সড়কটি পানির স্রােতে ভেঙ্গে দ্বি-খন্ডিত হয়েছে। ভাঙ্গন স্থান দিয়ে বর্তমানে প্রবল বেগে পানি গড়ছে। একারনে সেখানে আপাতত কাজ করা সম্ভব নয়। বাঁধের অধিকাংশ স্থানে যমুনার পানি চুয়ে প্রবেশ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যেখানেই পানি চুয়ে প্রবেশ করছে, দ্রুত সেখানে কাজ করা হচ্ছে। আটাচরেও ইতিমধ্যে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চলছে।