বগুড়ার ধুনটে বন্যার পানতিে নারীর মৃত্যুঃ বাঁধ ভাঙার আশংকা

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. ধুনট (বগুড়া)
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯ ১৩:১৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৩৭ বার।

বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানিবৃদ্ধির ফলে ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় বন্যার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ধুনট উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশের আশংকা দেখা দিয়েছে। 

বগুড়া জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে গত শনিবার দুপুরে সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যুমনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। গত ৫ দিনে যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের যমুনা নদীর চরাঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার ১০২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিরাপদস্থানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০হাজার পরিবার। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে মাত্র ২ হাজার পরিবার। এছাড়া অধিকাংশ পরিবার গুলো পানিবন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে বন্যাদুর্গত পরিবার গুলো গবাদী প্রাণি ও শিশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বাঁধে আশ্রিত এবং পানিবন্দি পরিবার গুলোর রান্নার সমস্যার কারনে পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি, জরুরী মেডিসিন এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট রয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় তিন উপজেলার ৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা মূল্যের ২২২টি পুকুরের ৭৪ মেট্রিকটন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এদিকে বুধবার সকালে বন্যার পানিতে ডুবে ধুনট উপজেলার ভূতবাড়ী গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী হাসিনা খাতুন (৫০) মারা গেছেন। 

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা নদী হিং¯্র হয়ে উঠেছে। পানি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে। তিন উপজেলায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। বালু-মাটির তৈরী এই বাঁধের অসংখ্য স্থানে ঈঁদুরের গর্ত এবং দুর্বল অংশ দিয়ে পানি চুয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্থান গুলোতে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবুও বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে বাঁধের যে কোন স্থানে ভেঙ্গে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশের আশংকা দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ৬টি উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পুরো বাঁধ সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। বালুর বস্তা এবং জিওব্যাগ দিয়ে পানি চোয়ানো বন্ধে কাজ শুরু হয়েছে। 

বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রায়হানা ইসলাম জানান, তিন উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩২২ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও এক হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।