৬ মাসে শেষ করতে হবে ধর্ষণ মামলার বিচার: হাইকোর্ট

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯ ১৫:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৭ বার।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ বা ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব মামলা সুষ্ঠু ও আরও কার্যকর উপায়ে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনাসহ সাত দফা আদেশ দেন। এসব নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়নে সরকার অতি অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করবে বলে আদালত আশা প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতের আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠাতেও বলা হয়েছে।

সাত দফা নির্দেশনা: ১. ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনে নির্ধারিত সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা পাওয়ার দিন থেকে ১৮০ দিন) মধ্যে যাতে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. ট্রাইব্যুনালগুলোকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০ ধারার বিধান অনুসারে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৩. ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্নিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যেসব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেখানকার সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটররা মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

৪. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সংগত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। ৫. সাক্ষীদের ওপর যাতে দ্রুত সময়ে সমন জারি করা যায় সে বিষয়টিও তদারকি করবে মনিটরিং কমিটি। ৬. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পর অফিসিয়াল সাক্ষী যেমন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ প্রদান করবেন। এবং ৭. আদালতের অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা পৃথক তিনটি মামলায় আসামিদের জামিন চেয়ে করা আবেদনের বিষয়েও পৃথক আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে পৃথক দুই মামলায় আসামি মো. রাহেল ওরফে রায়হান ও সেকান্দার আলীর জামিন নামঞ্জুর এবং অন্য এক মামলায় সারওয়ার রুবেল ও এমরানের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। আদালতে জামিন আবেদনকারী চার আসামির পক্ষে শুনানি করেন গোলাম আকতার জাকির, মারজিয়া জামান ও আবদুল্লাহ আল মাহবুব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হাসিনা মমতাজ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন।

হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হাসিনা মমতাজ সাংবাদিকদের জানান, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের সব অধস্তন (নিম্ন) আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা রয়েছে। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ অনুসরণ করেই হাইকোর্ট ধর্ষণ মামলার বিচারে নিম্ন আদালতের ওপর সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। হাইকোর্টের এই নির্দেশনা নিম্ন আদালতের বিচারকরা অনুসরণ করতে বাধ্য।