কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে

বগুড়ায় বাঙালি নদী ফুলে ফেঁপে উঠছে: ১২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৭:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩০৪ বার।

বগুড়ায় যমুনার পানি কমলেও পাশের বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ওই দুই নদী তীরবর্তী তিন উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বাঙালী নদীর পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় ওই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ফসলী জমিগুলোতে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট, আউশ ধান এবং শাক-সবজির।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী উভয় নদীর দুকূল উপচানো পানিতে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় এ পর্যন্ত ১২ হাজার ২৩০ হেক্টর ফসল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই তিন উপজেলার ৬২ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী রোববার পর্যন্ত টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৩ কোটি। তবে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাঙালি নদী লোকালয়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং তার দু’পাড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় আরও ফসল হানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে পারে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী গেল বছর বন্যায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৭ হাজার ৯৭৩ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এতে ৮৩ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালে বন্যায় ৪২৫ কোটি টাকারও বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের প্রথম দিকে যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ১৩ জুলাই দুপুর নাগাদ যমুনা বিপদ সীমা অতিক্রম করে। এরপর টানা কয়েকদিন পানি বৃদ্ধির ফলে এক সময় এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। তবে প্রায় ৬দিন ধরে পানি বৃদ্ধির গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা থেকে যমুনার পানি আমার কমতে শুরু করে কিন্তু পাশের বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। ফলে গত ১৯ জুলাই বাঙালি নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে এবং রেবাবার বেলা ৩টায় ৫৬ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। একই সময়ে যমুনা বইছিল বিপদ সীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
বাঙালি নদী তীরবর্তী সোনাতলা উপজেলা সদরের নামাজখালি গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, তার সব জমিই ওই নদীর তীরে অবস্থিত। হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় তার পাট ও আউশের ক্ষেতে পানি ঢুকে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমির মধ্যে হয়তো অর্ধেক বিঘা জমির পাট ঘরে তোলা যাবে। বাকি পাট সব ভেসে গেছে। আর তিন বিঘা জমিতে লাগানো আউশ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।’
বগুড়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটের। অবশ্য আমনের বীজতলারও অনেক ক্ষতি হয়েছে। কেটে ফেলার আগ মুহুর্তে বন্যার পানিতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে ৭০ হেক্টর সবজি ও ১০ হেক্টর মরিচের ক্ষেতে। তিনি জানান, লোকালয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালি নদীতে পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন বাঙালি নদীর দুপাশে কোন বাঁধ নেই। ফলে তার দুকূল উপচানো পানি সরাসরি ফসলী ক্ষেতে ঢুকে পড়ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রোববার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি তাতে টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১২৩ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটা চুড়ান্ত নয়। আরও বাড়তে পারে।’
বগুড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, বাঙালি নদীর প্রবাহ সাধারণত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার উজানে গাইবান্ধায় যমুনা, করতোয়া, এলাই ও ঘাঘট নদীর অন্তত ১৮টি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই পানিগুলো বাঙালিতে ঢুকে পড়েছে। ফলে বাঙালির পানি ক্রমাতগতভাবে বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, ‘আর দু’দিন হয়তো বাঙালির পানি বাড়তে পারে। তারপর দ্রুত কমতে শুরু করবে।’