‘ছেলে ধরা’ গুজব এবার বগুড়ায়: ৪ ব্যক্তিকে গণপিটুনি: পিক-আপ ভ্যানে আগুন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৯ ১৫:২১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৪৯ বার।

‘ছেলে ধরা’ সন্দেহে এবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বৈঠাভাঙ্গা এলাকায় ৪ যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে নিজ অফিস কক্ষে নিলে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনই ঘেরাও করে। তারা সন্দেহভাজন ৪ যুবককে তাদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠুকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। 
পরে পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অবরুদ্ধ চেয়ারম্যানসহ সন্দেহভাজন ৪ যুবককে উদ্ধার করতে গেলে জনতা আইন-শৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে আটক ৪ যুবকের ব্যবহৃত পিক-আপভ্যানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে জনতার রোষানলে পড়া ৪ যুবককে গাবতলী থানায় নিয়ে যায়। এরা হলো- গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামের হযরত আলী প্রামাণিকের ছেলে ফাহিম প্রামাণিক (২৪), পার ধুনট মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে লুৎফর রহমান (৩৫), ধুনট জোড়শিমুল গ্রামের নজির হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন (২২) ও তার ভাই নিয়ামুল হোসেন (৩৬)। তবে পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ১২জনকে আটক করেছে। 
গাবতলী উপজেলার দুর্গহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু জানান, ওই ৪ যুবক বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একটি পিক-আপ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-১৩-৩৮৪৯) নিয়ে বৈঠাভাঙ্গা গ্রামের দিকে ঘোরাঘুরি করছিল। তাদের ব্যবহৃত পিক-আপের ভেতরে ধারালো চাকু দেখার পর গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। এরপর তাদের পরিচয় এবং বৈঠাভাঙ্গা গ্রামে আসার কারণ জানতে চাইলে ওই ৪ যুবক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে। এতে গ্রামবাসীর সন্দেহ বাড়ে এবং এক পর্যায়ে তারা ওই ৪ যুবককে এলোপাথারী মারপিট শুরু করে। বিষয়টি জানার পর তিনি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই ৪ যুবককে উদ্ধার করেন এবং বিকেল ৪টার দিকে দূর্গাহাটা বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাখেন। পরে গাবতলী থানায় খবর দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সেখানে জনতার ভিড় বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে শত শত জনতা ৪ যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। তা না শোনায় বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যানকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে গাবতলী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে জনতা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর পুলিশের গাবতলী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন ও গাবতলী থানার ওসি সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন ৪ যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। কিন্তু পুলিশ তাতে রাজি না হওয়ায় গ্রামবাসী আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অবশ্য রাত  সাড়ে ৭টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আটক সন্দেহভাজন ওই ৪ যুবককে থানায় নিয়ে যায়।
দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু জানান, ওই ৪ যুবক ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করছিল। গাবতলী থানার ওসি সেলিম হোসেন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার কারণে ১২জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সন্দেহভাজন ৪ ব্যক্তির ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।