ভারতে গণপিটুনি: কঠোর ব্যবস্থা নিতে মোদিকে খোলাচিঠি ৪৯ বিশিষ্টজনের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৯ ১৩:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৮ বার।

ভারতের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের নামে চলছে গণপিটুনি। সরকারবিরোধী কথা বললেই বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি পরিণত হয়েছে যুদ্ধের স্লোগানে।- এসব অভিযোগে ও মুক্তচিন্তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশিষ্টজনরা। এসবের জন্য কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে ধর্মের নামে এই উন্মাদনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনরা। আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগালের মতো চিত্র পরিচালকের পাশাপাশি চিঠিতে সই করেছেন কলাকাতার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনের মতো চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টজনরা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।

এ চিঠিতে চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, লেখক, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, চিকিৎসক, পরিবেশবিদ, ভাস্কর, চিত্রকর, শিক্ষাবিদ, গায়ক, ফ্যাশান ডিজাইনারের মতো বিভিন্ন পেশার ৪৯ বিশিষ্টজন সই করেছেন। নিজেদের শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ উল্লেখ করে গণপিটুনি ও ধর্মের নামে চলমান উন্মাদনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ  করেছেন তারা। বিশেষ করে দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার ও গণপিটুনির জন্য তারা কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করেছেন।

চিঠির শুরুতেই বিশিষ্টজনরা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তারা লিখেছেন, 'ভারত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমানাধিকার। সংবিধানই সেই অধিকার দিয়েছে।' 

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা বলেন, ২০১৬ সালে দলিতদের ওপর ৮৪০টি অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। অথচ দোষীদের বিচার হয়েছে এমন নজির প্রায় নেই। এছাড়া আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা ও রিপোর্টের উল্লেখ করে গণপিটুনি ও অন্যান্য অত্যাচারের ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।

সরকার যে এসব ঘটনা কঠোর হাতে দমন করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়েছে, 'ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করতে হবে এবং দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। খুনের ক্ষেত্রে যদি প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান থাকে, তাহলে গণপিটুনির ক্ষেত্রে কেন নয়। এটা বরং আরও ঘৃণ্য। কোনো দেশেই কোনো নাগরিক ভয়-ভীতির মধ্যে থাকুক এটা কাম্য নয়।'

'জয় শ্রীরাম' না বলায় মারধর ও গণপিটুনির মতো ঘটনা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়ই ঘটছে। কিছু দিন আগে বিহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবককে 'জয় শ্রীরাম' না বলায় গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বিশিষ্টজনরা বক্তব্য, 'জয় শ্রীরাম এখন এক যুদ্ধের হুঙ্কার। এই স্লোগানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো এই উন্মদনা হচ্ছে ধর্মের নামে। এটা তো মধ্যযুগ নয়। ...রামের নামে এই উন্মাদনা আপনি অবিলম্বে বন্ধ করুন।'

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তুলেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি তথা এনডিএ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সরকার বা শাসক দলের বিরুদ্ধ কেউ কিছু বললেই দেশদ্রোহী ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেও মনে করেন তারা। এই প্রবণতার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনরা।