জীবন্ত নয়, স্পুটনিকে চড়ে মহাকাশে পৌঁছেছিল লাইকার লাশ, জানা যায় ৩৫ বছর পরে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১৯ ১৫:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৭১ বার।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, অবলা জীবের প্রাণ যায়। ১৯৫৭ সালে মহাকাশ দখলের লড়াইয়ে মত্ত ছিল তৎকালীন দুই প্রবল ক্ষমতাশালী দেশ সোভিয়েত রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুরু হয়েছিল তীব্র প্রতিযোগিতা। কোন দেশ আগে মহাকাশে পৃথিবী থেকে কোনও প্রাণীকে পাঠাবে? ক্ষমতা প্রদর্শনের এই লড়াইয়ে প্রাণ গিয়েছিল লাইকা-র।

লাইকা ছিল মস্কোর পথের কুকুর। সবাই জানত, সে আর ফিরবে না। ফেরেনি সে। মানুষের বিজ্ঞান সাধনায় প্রাণ গিয়েছে বহু প্রাণীর। তাদের মধ্যে লাইকা অন্যতম।

১৯৫৭ সাল।

পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুটনিক-১’-এর সাফল্যের পর মহাকাশে সোভিয়েত আধিপত্য কায়েম করতে জীবন্ত প্রাণী পাঠানোর লক্ষ্য স্থির করা হলো।

মস্কোর রাস্তা থেকে বেছে নেওয়া হলো তিন বছরের স্ত্রী প্রজাতির একটি কুকুর। বিজ্ঞানীদের যুক্তি ছিল, মস্কোর পথের কুকুর হওয়ার জন্য সে কষ্টসহিষ্ণু। কারণ অনাহার ও তীব্র ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা আছে তার।

এর আগে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়া দু’টি দেশই পৃথিবীর বাইরে কুকুর পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাদের পাঠানো হয়েছিল সাব-অরবিটাল ফ্লাইটে। লাইকা-ই প্রথম কুকুর যাকে পাঠানো হয়েছিল পৃথিবীর কক্ষপথে।

লাইকার সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল ‘অ্যালবিনা’ ও ‘মুশকা’ নামের আরও দু’টি কুকুরকে। লাইকা-র ব্যাক আপ হিসেবে। তাদের রাখা হয়েছিল অত্যন্ত ছোট খাঁচার ভিতরে। যাতে মহাকাশযানে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়।

খেতে দেওয়া হত এক রকমের বিশেষ পুষ্টিকর জেল। যা ছিল মহাকাশযানে তাদের একমাত্র খাবার। কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হত অত্যন্ত তীব্র শব্দ। সে ভাবে অভ্যস্ত করা হচ্ছিল মহাকাশ যাত্রার জন্য। তাদের হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শ্বাস প্রশ্বাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হত।

শোনা যায়, প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত সবাই জানতেন লাইকা আর ফিরবে না। মহাকাশযাত্রার আগের দিন লাইকাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এক বিজ্ঞানী। তাঁর সন্তানরা খেলেছিল লাইকার সঙ্গে। বিজ্ঞানী চেয়েছিলেন, যাতে মৃত্যুর আগে একদিন অন্তত ভাল থাকতে পারে লাইকা।

১৯৫৭-র ৩১ অক্টোবর মহাকাশযান স্পুটনিক-২-এ রাখা হয় লাইকা-কে। ৩ নভেম্বর পৃথিবী সাক্ষী থাকে স্পুটনিক-২-এর লঞ্চের। একই সঙ্গে শেষ বিদায় জানানো হয় লাইকা-কে। শেষ মুহূর্তে তার হৃদস্পন্দন পৌঁছে গিয়েছিল ২৪০/মিনিটে। মহাকাশযাত্রার আগে তার হৃদস্পন্দন ছিল ১০৩/মিনিট। শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। তবে নিরীহ লাইকা-র মৃত্যুর মূল কারণ ছিল আতঙ্ক।

দীর্ঘ বছর ধরে গোপন রাখা হয়েছিল লাইকার মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য। প্রথমে বলা হয়েছিল, স্পুটনিক-২ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার পরে কয়েক দিন জীবিত ছিল লাইকা। কিন্তু বহু বছর পরে স্বীকার করে নেওয়া হয়, স্পুটনিক-২ লঞ্চ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মারা গিয়েছিল সে। ১৯৯৩ সালে এই তথ্য প্রকাশ করেন রাশিয়ান স্পেস ডগ ট্রেনার ওলেগ গেজেঙ্কো।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লাইকা জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে। আমেরিকায় ভেগান লাইফস্টাইল অ্যান্ড অ্যানিমাল রাইটস ম্যাগাজিনের নাম ‘লাইকা’। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে অন্তত ১০ কোটি জীবজন্তুর প্রাণ যায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণায়। বায়োলজি ক্লাস, মেডিক্যাল ট্রেনিং বা কেমিক্যাল, ড্রাগ, ফুড ও কসমেটিক্স টেস্টিং-এর জন্য কাঁটাছেঁড়া করা হয় নিরীহ জীবজন্তুদের। সুত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা।