বগুড়ার শেরপুরে প্লাবিত ৬০টি গ্রাম, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৯ ১২:৫৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৩ বার।

বগুড়ার শেরপুরে বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পৌর এলাকাসহ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে পৌরশহরের বেশ কয়েকটি এলাকাসহ অন্তত ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।

বন্যার পানি উঠায় পনেরটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সবজিসহ রকমারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একাধিক জলাশয়ের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এদিকে উপজেলার দু’টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও ভাঙন শুরু হয়েছে। এমনকি যে কোন সময় এই বাঁধ দু’টি ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এতে করে ওই এলাকার আরও ২০টি গ্রাম হুমকির মুখে রয়েছে। তবে সাহেববাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশে মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া বাঁধটির ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাঁশের পাইলিং ও সিসি ব্লক ফেলার আয়োজন চলছে বলেও জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই দুই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে পৌরসভার ৩নংওয়ার্ডের ঘোষপাড়া, নামা ঘোষপাড়া, পূর্বদত্তপাড়া, উত্তরসাপাড়া, দক্ষিণসাহাপাড়া, গোসাইপাড়ায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

অত্র ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ জানান, এসব এলাকার বাসা-বাড়িতে এখন কোমর পানি। তাই তাদের বিভিন্ন স্কুল ও উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি মাত্র পৌর উত্তরবাহিনী মহাশশ্মান। সেটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে মৃতদেহ সৎকার করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। সর্বপরি বন্যা কবলিত মানুষের পাশে সামর্থবান ব্যক্তিদের দাঁড়ানোর আহবান জানান এই পৌর কাউন্সিলর।

এদিকে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর, জুয়ানপুর, মহিপুর, বাংড়া, কানুপুর, ফুলবাড়ী, চকপাথালিয়া, রামনগর, খামারকান্দি ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী, মাগুড়ারতাইড়, খামারকান্দি, ঝাঝর, বিলনোথার, পারভবানীপুর, নলডিঙ্গি, ঘোরদৌড়, বোয়ালমারী, ভাতাড়িয়া, বেড়েরবাড়ি, শুভগাছা, খানপুর ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া, নলবাড়িয়া, দরিখাগা, গোপালপুর, ভাটরা, শুভলী, শালফা, চকখানপুর, দহখানপুর, খানপুর, গজারিয়া, বরিতলী, বোয়ালকান্দি, শৈল্যাপাড়া, তালপুকুরিয়া, পান্তাপাড়া, শাফলজানি, ভীমজানি, খাগা, ভান্ডারকাফুরা ও সুঘাট ইউনিয়নের সুঘাট, ফুলজোড়, চোমরপাথালিয়া, চকনশি, বেলগাছি, চকধলী, চককল্যাণী, বিনোদপুর, ম্যাচকান্দি, জোরগাছা, বেটখৈর ও সুত্রাপুর।

খামারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব জানান, এসব গ্রাম বন্যায় নিমিজ্জিত হয়ে পড়েছে। বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। নৌকা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। সব রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সবজি চাষীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। দিনমজুর মানুষগুলোরও চরম দুরবস্থা। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী হচ্ছে। তবে কোন এখনও কোন সহায়তা পাননি বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, বন্যায় সোমবার পর্যন্ত ১৭৮ হেক্টর রোপা-আউশ, ৩৩হেক্টর সবজি, ৩৭০ হেক্টর রোপা অমনের বীজতলা, ১হাজার ২৫০ হেক্টর আমন ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ৩হাজার ৫৮৫জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ জানান, বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই সেই অনুযায়ী সরকারি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।