তিনটি স্থানে সওজের মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে

বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে সৃষ্ট যানজট বৃহস্পতিবারও থাকবে

দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০১৯ ১১:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৯৫ বার।

তিনটি স্থানে মেরামত ও সংস্কার কাজের কারণে বগুড়া-রপুর মহাসড়কে বুধবার দিনভর তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার সকাল ১১টার পর থেকে বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া থেকে শিবগঞ্জের মোকামতলা পর্যন্ত ওই মহাসড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে কয়েক শ’ যানবাহন আটকা পড়ে। এতে শত শত যাত্রী চরম দূর্ভোগে পড়েন। এরই মধ্যে বুধবার দুপুরে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
মহাসড়কের ওই অংশে যানজট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৩ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। বিকেল ৪টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও যানবাহনগুলোকে খুবই ধীর গতিতে চলতে দেখা গেছে। 
বগুড়ায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘোপাড়া ও গোকুল অংশের সংস্কার কাজ শেষ হলেও মহাস্থান বাজারের সামনের মেরামতের কাজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। ফলে যানজট আরও একদিন থাকতে পারে।
বগুড়ায় সওজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোরবাণীর ঈদের আগে ও পরে যান চলাচল নির্ঞ্ঝাট করতে সারাদেশের মতই বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সওজের সদর দপ্তরের নির্দেশে পিরিয়ডিক মেইনটেইনেন্স প্রোগ্রামের (পিএমপি) আওতায় বুধবার সকালে বগুড়া সদরের গোকুল ও বাঘোপাড়ায় মহাসড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো ভরাট করে তার ওপর বিটুমিন ঢেলে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। এছাড়া সওজের বগুড়া বিভাগের উদ্যোগে শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান বাজারের সামনে মহাসড়ক উঁচু করারও কাজ শুরু করা হয়। 
মাত্র ৩ কিলোমিটারের মধ্যে মহাসড়কের তিনটি স্থানে এভাবে মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু করায় বুধবার বেলা ১১টা থেকে যানজাট শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে শুরু করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ জয়পুরহাটগামী যানবাহনগুলোর চাকা বাঘোপাড়া পৌঁছার আগেই একে একে স্থবির হয়ে পড়ে। একইভাবে ওই ৯টি জেলা থেকে ছেড়ে আসা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা কয়েক শ’ যানবাহন আটকা পড়ে মোকামতলা এলাকায়। 
বুধবার দুপুর পৌণে ১টার দিকে এ প্রতিবেদক বাঘোপাড়া এলাকায় পৌঁছার পর পায়ে হেঁটে মহাস্থান বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পথে শত শত  বাস এবং পণ্য বোঝাই ট্রাককে থেমে থাকতে দেখেন। তবে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের গাড়ি এবং কয়েকজন কনস্টেবলকে দেখা গেলেও উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। আর সেই সুযোগে ছোট ছোট যানবাহনগুলোকে লেন অমান্য করে চলাচলের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। যে কারণে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুর গামী বাসের চালক মোহাম্মাদ মানিক মিয়া জানান, সকাল ১১টার দিকে বগুড়া শহরের মাটিডালী এলাকা পেরিয়ে এলেও ৩ ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার দূরে মহাস্থান পর্যন্ত তিনি পৌঁছাতে পারেন নি। তিনি বলেন, ‘সড়কে পুলিশ না থাকায় কোন চালকই লাইন মানছেনা। সবাই লেন উপেক্ষা করে তিন চার লাইন তৈরি করছে।’ 
গোকুল উত্তরপাড়া এলাকার যে স্থানে  ওই মহাসড়ক মেরামতের কাজ চলছিল সেখানে সওজের কোন কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। তবে হাাইওয়ে পুলিশের দুই সদস্যকে দেখা গেলেও তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি। নেমপ্লেটে লেখা ‘বাদল’ নামে পুলিশের এক সদস্য পু-্রকথাকে বলেন, ‘সামনে আমাদের সার্জেন্ট স্যার আছে ওনার সঙ্গে কথা বলেন।’ তবে মহাস্থানগড় বাজারে সামনে হাইওয়ে পুলিশের একটি গাড়ি দেখা গেলেও সড়কে তাদের দেখা মেলেনি। এ সময় গাড়ির মধ্যে রব্বানী ও বাতেন নামের দুই সদস্যকে বসে থাকতে দেখা যায়। কথা বলতে চাইলে বাতেন নামে হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘আরও সামনে আমাদের স্যার আছে ওখানে কথা বলুন।’ তবে ঠিক কোথায় বা কত সামনে তার সেই ‘স্যার’ রয়েছেন সেটি তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি।
রংপুরের দিক থেকে আসা শাহরিয়ার নামের এক বাস যাত্রী জানান, সকাল ১১ টার দিকে মোকামতলা ওঠার পর দুপুর ২টায় তিনি গোকুল পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। সহসা যানজট নিরসনের কোন সম্ভাবনা না থাকায় তিনি পায়ে হেঁটেই বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। মহাস্থান হাটে আসা নজরুল ইসলাম নামের এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে বাঘোপাড়া পার হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আল্লাহই ভালো জানে কখন পৌঁছাতে পারবো।’
সওজ বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, মহাসড়কের তিনটি স্থানে সংস্কার ও মেরামত কাজ চলার কারণে কিছুটা যানজট হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের ৭ দিন পূর্বে সব মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। আজ (বুধবার) বাগোপাড়া ও গোকুল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। মহাস্থান বাজারের কাজ শেষ করতে আরও একদিন লাগবে।’