বগুড়ায় দশ মাসে ১৪০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানিঃ শীর্ষে পামোলিন ওয়েল

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৩৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৬০ বার।

বগুড়ায় কলকারখানাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি বেড়েই চলেছে। রপ্তানি করা পণ্যের তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে তৈরি পোশাক- যার গন্তব্য যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বগুড়া থেকে রপ্তানী হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ মার্কিন ডলার সমমূল্যের প্রায় ১৪০ কোটি টাকার পণ্য। ৪৭৩টি লেটার অব ক্রেডিটে (এলসি) এসব পণ্য রপ্তানি হয়।
বর্তমানে প্রতি মাসে রপ্তানি পরিমাণ গড়ে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ধরে বছরের বাকি আড়াই মাসে আরও ২৭ লাখ মার্কিন ডলার বা ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানী  হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানী হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার বা ১০০ কোটি টকার কিছু বেশি পণ্য। চেম্বার নেতৃবৃন্দের আশা চলতি বছর রপ্তানীর যে ধারা তা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
রপ্তানীর ক্ষেত্রে এতদিন পাটের সূতা, সুতলী এবং বস্তা শীর্ষে থাকলেও এবার তাকে ছাড়িয়ে গেছে পরিশোধিত পামোলিন তেল। পাটজাত পণ্যের পরে জায়গা করে নিয়েছে অপরিশোধিত রাইস ব্রান অয়েল এবং তার পরে রয়েছে তৈরি পোশাক। তবে ওই চার ধরনের পণ্যের তিনটির গন্তব্য ভারত হলেও তৈরি পোশাক যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। চেম্বার নেতৃবৃন্দ বলছেন, ভাল মান এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায়  দেশের বাইরে বগুড়ায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৬২টি এলসি’র মাধ্যমে প্রায় ৪৩ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার বা ৩৬ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই বগুড়ায় উৎপাদিত সাবান ও সিরামিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি হতো। তবে গেল শতাব্দীর সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নানা কারণে রপ্তাীমুখি অনেক কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে যায়। তবে একমাত্র সিরামিক কারখানাটি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এবং সেখানে উৎপাদিত পণ্য তখন পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়েছে। পরবর্তীতে সেটিও বন্ধ হয়ে গেলে রপ্তানী বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পরে। তবে আশার কথা হলো আশির দশকের মাঝামাঝি ফাউ-্রি শিল্পের হাত ধরে বগুড়ায় নতুন করে শিল্পায়ন শুরু হয়। ফাউ-্রি কারখানায় উৎপাদিত সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প (সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য) কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এর চাহিদা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চোরাই পথেই ভারতের বাজারে ঢুকে পরে।
পরবর্তীতে স্থানীয় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের পর ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানী শুরু হয়। তবে আমলাতান্ত্রিক নানা জটিতলায় মাঝে কয়েক বছর রপ্তানী বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সাল থেকে তা আবারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ায় ৩৯টি ফাউন্ড্রি কারখানা রয়েছে। একইভাবে ১৯৯৯ সালে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ভারত থেকে জুট মিলের যন্ত্রাংশ এনে এ জেলায় জুট মিল স্থাপন শুরু করেন। তবে ২০০৪ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেলে তার যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হয়ে পড়লে এ জেলায় জুট মিলের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় একে একে জেলায় ২৪টি জুট মিল গড়ে উঠেছে।
 রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ‘হাসান জুট মিল’ ও ‘হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং মিল’-এর স্বত্বাধিকারী এবং হাসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম শফিকুল হাসান জুয়েল জানান, ২০০৩ সালে তারা প্রথম রপ্তানী শুরু করেন। সেই থেকে ক্রমেই রপ্তানী বাড়ছে। ২০১৭ সাল থেকে তারা পাটের তৈরি ব্যাগ বা বস্তা রপ্তানী শুরু করেছেন। তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্য মান সম্মত এবং দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণেই আমরা ভারতের বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করতে পেরেছি। যে কারণে প্রতি বছরই চাহিদা বাড়ছে।’
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন মনে করেন, এ জেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা গেলে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়তে থাকবে এবং দুই-তিন বছরের মধ্যে তা ১০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।