ডেঙ্গু দমনে দ্রুত মশার ওষুধ আমদানির নির্দেশ হাইকোর্টের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০১৯ ১৬:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৮ বার।

ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে বিদেশ থেকে কার্যকর নতুন ওষুধ দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে সরকারের দুই দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

নতুন ওষুধ আমদানির বিষয়ে তিন দফা শুনানির পর বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ  বৃহস্পতিবার কয়েক দফা নির্দেশনাসহ এই আদেশ দেন।

আদালত বলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ মশা মারার ওষুধ দ্রুত আনার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে 'লাইসেন্স' ও 'ছাড়পত্র'সহ সার্বিক সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি দেশের সব হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসককে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্ব দিতে হবে, যিনি পদমর্যাদায় অন্তত সহযোগী অধ্যাপকের সমান হবেন। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থাও করতে হবে।

এ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট যাতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত সরবরাহ করা হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের সবার চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও নিশ্চিত করতে হবে। অর্থের অভাবে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও অসহায় ব্যক্তিরা যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিন সকালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবীরা হাইকোর্টকে জানান, ওষুধ আনার দায়িত্ব শুধু সিটি করপোরেশনের একার নয়, সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু ওষুধ আনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের বলেই জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আর এর পরই ডেঙ্গু মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ আনার ব্যাপারে বক্তব্য জানতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাকে দুপুর ২টায় হাজির হয়ে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানাতে বলেন।

এর ধারাবাহিকতায় এলজিআরডি সচিব হেলালুদ্দীন হাজির হয়ে আদালতে জানান, এডিস মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ 'ম্যালাথিয়ন' বিদেশ থেকে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৮ জুলাই মিটিং করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ওষুধে মশা মারা যাচ্ছে না। দেশে ক্রাইসিস চলছে। আমরা বসে নেই। সবাই কাজ করছি।

সচিব হেলালুদ্দীন আরও বলেন, মশার উপদ্রব শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। গত ২৮ জুলাই মশা নিধনের জন্য ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, মশা নিধনের ওষুধ আপনারা আনবেন, নাকি সিটি করপোরেশন আনবে? সিটি করপোরেশন তো চাচ্ছে, আপনারা ওষুধ আনেন। আপনারা কী করছেন? জবাবে সচিব বলেন, দুই সিটি করপোরেশন আমাদের কাছে টাকা ও জনবল যখন যা চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। সিটি করপোরেশন তো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো করে কাজ করছে, আমরা তাদের সার্বিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আদালত এ পর্যায়ে বলেন, আপনারা সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করছেন, ভালো কথা। কিন্তু জিটুজির (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) মাধ্যমে তো তাড়াতাড়ি ওষুধ আনতে পারেন। সেক্ষেত্রে তো সময় অনেক কম লাগবে। স্থানীয় সরকার সচিব এর জবাবে বলেন, আমাদের তো কোনো কর্তৃপক্ষ বা মাধ্যম হয়ে ওষুধ আনতে হবে।

আদালত বলেন, আপনারা আগে ওষুধ আনেন। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আগে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন যে, ওষুধ আপনারাই সরাসরি আনবেন নাকি সিটি করপোরেশন আনবে। আপাতত পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। এ সময় সচিব হেলালউদ্দীন কোনো জবাব দিতে না পারায় তাকে এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার মধ্যে জানাতে সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।

পরে আদালতের আদেশের পর বেরিয়ে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কার্যকর ওষুধ আমদানিতে সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, হাইকোর্ট তার কাছে জানতে চেয়েছেন, জিটুজি পদ্ধতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে ওষুধ আনতে অসুবিধা কোথায়। তিনি বলেন, এটা পৃথিবীর কোনো দেশে সরকারিভাবে করা হয় না। বেসরকারি খাতে এটা প্রস্তুত করা হয়। সিটি করপোরেশন হলো একমাত্র প্রতিষ্ঠান মশা নিধনের জন্য। মন্ত্রণালয় দুই সিটি করপোরেশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। আমদানি করতে গিয়ে দূতাবাস, প্রয়োজনীয় অর্থ, জনবল যা যা দরকার সব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। দক্ষিণ সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইমাম টিপু।