তুষারের জামিনে সুস্মিতার মুখে হাসি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০১৯ ১৬:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪২ বার।

ভালোবেসে ব্রাহ্মণ মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথ অদিতিকে বিয়ে করার পর মিথ্যা মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হরিজন যুবক তুষার দাসকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এর ফলে তুষার দাসের মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার আদালতে আসামি তুষার দাসের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তুষার ও সুস্মিতা ভালোবেসে বিয়ে করেন দুই বছর আগে। তিন মাস আগে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান। কিন্তু তুষার দাস নিম্ন বর্ণের হওয়ায় শুরুতেই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার মা-বাবা।

অ্যাডভোকেট শিশির মুনির আরও জানান, মেয়ে নাবালিকা– এ অভিযোগ তুলে সুস্মিতার বাবা তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর তুষার দাস ওরফে রাজ সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু ওই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সুস্মিতার পরিবার। এরপর অপহরণের অভিযোগে সুস্মিতার বাবা ওই বছরের ২৪ অক্টোবর শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

গত ২৩ জুলাই মামলার রায় হয়। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আবদুস ছালাম খান। সুস্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তার কথা আমলে নেননি বিচারিক আদালত। রায় ঘোষণার দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তুষার।

তুষারকে জামিন দেওয়ার সময় হাইকোর্ট বলেন, বিষয়টি এমন যে, একদিকে আইন আর একদিকে সামাজিক বাস্তবতা। যদিও আইনে উঁচু-নিচু বর্ণে বিয়েতে কোনো বাধা নেই। মেয়ের পরিবারের সামাজিক বাস্তবতাটাও ভাবতে হয়। কারণ, আমাদের সমাজে অনেক সময় এ রকম ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারকে একঘরে করা হয়।

এদিকে, জামিন আদেশের পর উচ্ছ্বসিত হাসি দিয়ে হাইকোর্ট থেকে বের হন তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে থাকা সুস্মিতা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি খুব খুশি। ছোট্ট মেয়েটা ওর বাবাকে কাছে পাবে। ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তুষারকে বিয়ে করেছি। আমি মনে করি, ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু বিষয় নেই।'