বগুড়ার শেরপুরে বানভাসি মানুষের ভরসা এখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলা

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অগাস্ট ২০১৯ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৩৬ বার।

বগুড়ার শেরপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ফলে বন্যার পানিতে ভাসছে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বেশকয়েকটি এলাকাসহ এই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে আছে অর্ধলাখ মানুষ। রাস্তাঘাট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলাই এখন তাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। 

খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, জ্বালালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এসব এলাকার মানুষ।

তবে বন্যা পরিস্থিতি দ্রুতই উন্নতির দিকে যাবে-এমনটাই দাবি করে বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, 'যমুনা নদীর পানি কমলেও বাঙালি ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই শেরপুর অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি তেমন বোঝা যাচ্ছে না। এতে শঙ্কার কোন কারণ নেই। গত শনিবার থেকে এই দুই নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই অঞ্চলের বন্যার পানি নেমে যাবে বলে আশা করা যায়।'

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরশহরের ৩নং ওয়ার্ডের বেশকয়েকটি এলাকাসহ উপজেলার গাড়ীদহ, খামারকান্দি, খানপুর, সুঘাট ও সীমাবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ষাটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসী মানুষদের এখন একমাত্র ভরসা নৌকা ও কলাগাছের ভেলা। বসত ভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় অনেক পরিবার উঁচু স্থান ও উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি অর্ধলাখ মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে সীমাহীন দুভোর্গ পোহাচ্ছেন।

এসময় কথা হয় উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত গজারিয়া বড়ইতলী গ্রামের ফুলজান বিবির সঙ্গে। তিনি জানান, বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। পানির মধ্যে কোন রকমে চলাফেরা করছি। তবে রান্না-বান্না করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। খামারকান্দি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, বসতবাড়ির পাশাপাশি গ্রামের সব রাস্তায় পানি উঠেছে। তাই কাজও নেই। নৌকাও নেই। কলাগাছের ভেলা তৈরী করে কোন রকমে চলাচল করছি। কিন্তু গৃহপালিত পশুগুলো নিয়ে ভীষণ বিপদে আছেন বলে জানান।

খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বীয়া জানান, তার ইউনিয়নে সিংহভাগ গ্রাম বন্যায় নিমিজ্জিত হয়ে পড়েছে। বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। নৌকা ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। সব রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সবজি চাষীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। দিনমজুর মানুষগুলোরও চরম দুরবস্থা। তবে এলাকার বন্যাকবলিত মানুষ এখনও সরকারি কোন সহায়তা পাননি বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার জানান, প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী এই বন্যায় ৩হাজার ৫৮২জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা হাতে পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে এই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনসহ তার দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ জানান, বন্যা কবলিত এলকার জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসন ও সরকারি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অচিরেই শুরু করা হবে বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।