রাণীনগরে কামারদের কাটছে ব্যস্ত সময়

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ০৫ অগাস্ট ২০১৯ ১১:২১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২২১ বার।

পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নওগাঁর রাণীনগরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা। দম ফেলবারও সময় নেই তাদের। দিন-রাত টুং টাং শব্দ আসছে কামার দোকান থেকে। আর সাত দিন পরই ১২ আগষ্ট আগামী সোমবার মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস টুকরো করার জন্য দা,কাটারী, ছুরি অপরিহার্য। আর এ কাটারী, দা ও ছুরি তৈরি করে কামাররা। 
রাণীনগর বাজার, ত্রিমহনীর হাট, কুবরাতলীর মোড়, রেলগেট, কুজাইল বাজার, বেতগাড়ী বাজার, করজগ্রাম,আবাদপুকুর হাট, কাটরাশাইন বাজার, লোহাচূড়া হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজার কামারপাড়া সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাপরে আগুনের তাপে খাম ঝরছে কামারের শরীরে। ইস্পাত কঠিন হাত দুটি আঘাত করছে লোহার বস্তুতে। শক্ত আঘাতে বদলে যাচ্ছে লোহার ধরন। তৈরি হচ্ছে গোশত কাটার অস্ত্র। কামারপাড়ার এ দৃশ্য নতুন নয়। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরেই বাড়ে এ ব্যস্ততা। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বানাচ্ছে কামাররা। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি নওগাঁ শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফলাসহ বিভিন্ন জিনিজপত্র তৈরি করছে কামাররা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামারশিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প। কামারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কোরবাণির ঈদকে ঘিরেই তাদের ব্যবসা জমে। এ সময় ঋণ করে হলেও লৌহজাত সামগ্রী। (ইস্পাত-লোহা) এনে গোশত কাটার সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। দরদামের বিষয়ে তারা জানান, এখন কামাপাড়ায় প্রতি পিস ছুরি ৫০ -১০০ থেকে ১৫০ টাকা, চাপাতি ৩০০-৪৫০ টাকা, দা ১৫০-৩০০ টাকা, বটি দা ১২০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লৌহা থেকে ইস্পাতের সরঞ্জামের দাম বেশি। আর চাপাতিতে লৌহজাত সামগ্রী বেশি লাগে, তাই কেজি হিসাবে বিক্রি করেন।
রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কামারশিল্পী সদয় কর্মকার জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রাদির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তবা এক সময় এই পেশা আর থাকবেনা। রেডিমেড বিক্রির পাশাপাশি অর্ডার অনুযায়ী পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম তৈরি করে বিক্রি করা হয়। কাজের ওপর নির্ভর করে মেরামত খরচ পড়ে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পযন্ত। সদয় কর্মকার আরো জানান, গোশত কাটা বা চামড়া ছড়ানোর ছোট-বড় ৮ থেকে ১০ ধরনের ছুরি-চাকু তৈরি করেন তারা। প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন সেসব। এছাড়া , বঁটি দা ১২০ থেকে ১২০০-১৪০০ টাকা দামে বিক্রি করেন। পশু জবাইয়ের মাঝারী ছুরি ২৫০-৬৫০, বড় ছোরা ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকাও বিক্রি করেন।  ত্রীমোহনী গ্রামের নারায়ন চন্দ্র কর্মকার বলেন, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি,কাটারী তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমার নেই।  আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই কাজ করে আসছে সারা বছর তেমন কাজ হয়না। কোরবানি আসলে আমাদের ভাল কাজ হয় যা দিয়ে সারা বছর চলার জন্য কিছু আয় করে রাখি। করজগ্রামে  কামারশিল্পী নিবারণ বলেন, এই পেশায় আমরা যারা আছি খুবই অবহেলিত। এই পেশায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। কোরবানি ঈদ আসলে কিছু টাকা আয় করতে পারি। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের রাণীনগরের কামাদেরকে সুদ মুক্ত ঋন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুড়ে দাড়াবে। সচেতন মহল মনে করেন কামারদের সরকার কিছু আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা দরকার তা না হলে হয়ত এশিল্পী একদিন হারিয়ে যাবে।