ছেলের ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হলো মা-বাবার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অগাস্ট ২০১৯ ১৪:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৮ বার।

প্রেম করে বিয়ে, তারপর স্ত্রীর গর্ভে আসে সন্তান। কিন্তু সে সন্তান আর স্ত্রীকে মেনে নিতে অস্বীকার করেন স্বামী ও তার পরিবার। উপায় না দেখে স্ত্রীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। সেই মামলায় ১৪ বছর সাজা খেটে স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্তে মুক্তি পান স্বামী ইসলাম।

ইসলামের স্ত্রীর নাম মালা ও ছেলে নয়ন। ছেলের বয়স এখন ১৮। আদালতের শর্তানুযায়ী এ বছর জুলাইয়ে আত্মীয়সহ সবার উপস্থিতিতে বিয়ে হয় মালা ও ইসলামের।

স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় ইসলামের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। খবর দেশ রুপান্তর।

ইসলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধার ছেলে। শুক্রবার দুপুরে তিনি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ সময় কারা ফটকে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা, দুই বোন ও এক ভাই।

তবে ইসলামের ছেলে মিলন ও স্ত্রী মালা উপস্থিত ছিলেন না। ইসলামের বাবা জানান, তারা ঢাকায় রয়েছে। সেখান থেকে বাড়িতে আসবে।

যশোর কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৪ বছর ৬ মাস ২৯ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলেন ইসলাম। তার সাজা হয়েছিল ৩০ বছরের। সন্তান ও স্ত্রীকে মেনে নেয়ার শর্তে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এর আগে যশোর কারাগারে মালা ও তার ফের বিয়ে দেওয়া হয় গত ৩১ জুলাই। এরপর ঝিনাইদহ কারাগারে ইসলামের জামিন আদেশ পৌঁছালে সেখান থেকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার তাকে মুক্তি দেওয়া হলো।

কারামুক্ত ইসলাম বলেন, তিনি খুব খুশি। সন্তান পরিবারসহ তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান।

দুপুর আড়াইটার দিকে ইসলাম তার বাবা ও ভাই-বোনদের সাথে যশোর কারাগার থেকে বাড়ি ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা হন।

২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইসলাম প্রেম করে একই গ্রামের (লক্ষ্মীপুর) মালাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সাহস করে বাড়িতে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে মালা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ইসলাম তাকে অস্বীকৃতি জানায়। গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি নিয়ে মালা ইসলামের বাড়ি গেলে তাকে বের করে দেওয়া হয়।

২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি স্বাভাবিক নিয়মে মালার কোলজুড়ে আসে মিলন। মিলন ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মালার বাবা বাদী হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে ধর্ষণের একটি মামলা করেন ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ইসলামকে আটক করে। কিন্তু ইসলাম আদালতেও মালা ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেন। এসময় মালার আবেদনের প্রেক্ষিতে বাবা মিলনের ডিএনএ টেস্ট করা হলে তার পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হয়। আদালত ওই মামলায় ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ৩০ বছর কারাদণ্ড, এক হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।

রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ইসলামের সাজা বহাল থাকে।

পরে আপিল রিভিউ আবেদন করেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইসলাম। ইসলামের করা রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন।

তিনি তখন বলেন, বর্তমানে ইসলাম মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে সে নিজ বাড়িতে তুলে নিতে চায়। ইসলামের আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক আদেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাভ্যন্তরে ইসলাম ও মালার আবারও বিয়ে পড়ানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দু’পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে হয়। বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেওয়ার পর তার জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়।