নিরাপদ-নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অগাস্ট ২০১৯ ১০:৩০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭২ বার।

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

একই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালক অপসারন করে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও দুর্ঘটনামুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার দাবি সংগঠনটির।

শনিবার সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রীহয়রানী, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।

তিনি বলেন, রেলপথে টিকিট কালোবাজারী ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অবর্নণীয় দূর্ভোগে পড়ছে বেশিরভাগ ঘরমুখো যাত্রীরা। সড়ক পথে ফিটনেসবিহীন ট্রাকে পশু বহন, ফিটনেসবিহীন বাসে যাত্রী বহনের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, একদিকে বর্ষায় রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যানবাহনের গতি কমে গেছে। ধীরগতির কারণে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। অন্যদিকে মানবসৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির কড়া নিদের্শনা উপেক্ষা করে পথে পথে পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজীর কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের সড়ক-মহাসড়কে এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে পশুরহাটের কারণেও কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়া ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনা, বাসের ট্রিপ-সংখ্যা ঠিক রাখতে বেপরোয়া গতি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদে মহাসড়কে দূর্ভোগে পড়ছে ঘরমুখো লাখো যাত্রী।

নৌ-পথে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৩নং সতর্কীকরণ সংকেত চলছে। প্রবল স্রোতের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঠাঁলবাড়ি নৌ-রুটে ফেরি ও লঞ্চ পারাপার ব্যহত হচ্ছে। এখানে শতশত যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থেকে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ছে হাজার হাজার ঘরমুখো যাত্রী। পারাপারের অপেক্ষায় ৮ থেকে ১২ ঘন্টা বসে থেকে অভুক্ত যাত্রীরা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-ঘাট পার হচ্ছে।

প্রতিটি ঈদের ন্যায় এবারো অভ্যন্তরীণ রুটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়তি দামে টিকেট কাটতে বাধ্য হচ্ছে আকাশপথের যাত্রীদের। ঈদকেন্দ্রিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে সীমিত পরিসরে প্রতীকীভাবে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মনিটরিং টিমের কার্যক্রম থাকলেও আকাশপথের ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে আজো ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দুদক বা মনিটরিং টিমের কার্যক্রম নেই।

বিগত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারের ঈদে একটি লম্বা ছুটি থাকলেও এই ছুটিটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা যেতো।কিন্তু গার্মেন্টসসহ বেসরকারি খাতে অসহযোগিতা, পরিকল্পনাহীণতা ও অদুরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না।

সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে ভাড়া ডাকাতি চলছে। রিকশা, অটোরিকশা, বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার, লঞ্চ, বিমান সর্বত্র যে যার মতো ভাড়া আদায় করছে।

চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রুটে স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলসহ ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীর প্রতিটি রুটের স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা দেশের সব পথের ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানী বন্ধের জন্য দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ঈদকেন্দ্রিক সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী ও পশুবহন বন্ধ করা ও অদক্ষ চালক অপসারন করে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্মাণে সঠিক মাত্রায় উপকরণ ব্যবহার না করা, সময় মতো সংস্কার না করা, বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে দেশের ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৭০০ কিলোমিটার সড়ক। সারাদেশে ছোট-বড় প্রায় ২ শতাধিক সেতু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫০ কিলোমিটার রেলপথ, এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ আরও প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রেলপথ ও শতাধিক রেল সেতু। এসব কারণে এবারের ঈদেও পথে পথে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা।

এই ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৫ লাখ, দেশব্যাপী এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরও প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ যাত্রী। সব মিলিয়ে ১২ দিনে প্রায় ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ যাত্রীর ২৭ কোটি ট্রিপ যাত্রী ঈদ যাত্রার বহরে থাকবে।

বিগত বেশ কয়েকটি ঈদে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে প্রদত্ত সুপারিশ মালাসমূহ সরকার যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার কারণে বিগত ঈদুল ফিতরে অনেকটা স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এছাড়াও নানা প্রতিকূলতা, হামলা, মামলা, হুমকি উপেক্ষা করে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিটি ঈদে ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর বিগত ঈদে সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিগত ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ১৯.৩৯ শতাংশ, নিহত ২৪.৭১ শতাংশ এবং আহত ৪৮.৯৯ শতাংশ কমেছিল। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান সংগঠনটি।

এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় শুরু থেকেই সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

সংগঠনের মহাসচিব আরও বলেন, বিগত ঈদুল ফিতরে সারা দেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ২৩.৮৯ শতাংশ মোটরসাইকেল ও ৪৪.৮২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। এবারের ঈদে এই দুটি বিষয়ে নজরদারী করলে সড়ক দুর্ঘটনা ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রতিবছর ঈদুল আজহায় ঈদের নামাজের পর থেকে ঈদের পর দিন ২৪ ঘণ্টায় ৩ শতাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। এবারের ঈদে বেপরোয়া বাইকারদের কারণে এদুর্ঘটনা আরও বেড়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে।

তাই ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হলো: ১. সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। ২. পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে চাদাঁবাজি বন্ধ করা। ৩. সড়ক-মহাসড়কের উপর বসা পশুর হাট-বাজার উচ্ছেদ করা।

৪. টোলপ্লাজা গুলো সবকটি বুথ চালু করা। দ্রুত গাড়ি পাসিং করা। ৫. যানজট প্রবণ এলাকায় দ্রুত গাড়ি পাসিং এর উদ্যোগ নেওয়া। ৬. মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা। বেপরোয়া বাইকারদের নিয়ন্ত্রণ করা। ৭. ফুটপাত পরিষ্কার রাখা, পথচারীদের হাটাঁর পরিবেশ নিশ্চিত করা।

৮. পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা। ৯. দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্প্রীটগান ব্যবহার, উল্টোপথে গাড়ী চলাচল বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

১০. রেলপথে টিকিট কালোবাজারী বন্ধ করা। ১১. ক্রাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে সড়ক মহাসড়ক প্রতি ইঞ্চি অবৈধ দখল ও পার্কিং মুক্ত করা। ১২. নৌ-পথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা।