কৃষ্ণাকে কেন ভয় পেতেন সানজিদা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ অগাস্ট ২০১৯ ০৬:৫০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৬৫ বার।

দুজনের বন্ধুত্বটা বেশ গাঢ়। মাঠের বাইরের তাদের এই বন্ধুত্বের ছোঁয়া পাওয়া যায় খেলাতেও। কৃষ্ণা রানী সরকার ও সানজিদা আক্তারের যে মাঠে দারুণ বোঝাপড়া। দেশের নারী ফুটবলের দুই সেরা তারকার বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে এই প্রতিবেদন- 

ফেইসবুকে দুজনের কাভার ফটোতে একই ছবি। সর্বশেষ বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপে গোল করার পর কৃষ্ণা ছুটে আসছেন সানজিদার দিকে। বন্ধুর জন্য হাত বাড়িয়ে সানজিদাও। তার এসিস্ট থেকেই এসেছে গোলটি। দেশ রূপান্তরের তোলা ছবিটা যেন দুজনের অটুট বন্ধুত্বের কথাই জানান দিয়ে যায়।

না, শুধু এই একটা ছবি নয়। কৃষ্ণা-সানজিদার যুগলবন্দি ছবি আছে অনেকই। কিন্তু ছবি থাকলেই কি আর কেউ কারও প্রিয় বন্ধু হয়ে যায়? না, কৃষ্ণা-সানাজিদা শুধু বন্ধু নয়, তার চেয়ে যেন বড় কিছু। কৃষ্ণা যেমন বললেন, “আমি আসলে আমার সব কথাই ওর সঙ্গে শেয়ার করি।” সানজিদাও বলেন, তার মনের কথা সবার আগে জানান কৃষ্ণাকে।

যেভাবে বন্ধুত্বের শুরু

ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়ে সানজিদা আর কৃষ্ণার বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। দুজনের পরিচয় ২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাছাই আসরের জন্য আয়োজিত ক্যাম্প থেকে। কৃষ্ণা আগের বছরই খেলেন অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে। সানজিদা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে সেবারই প্রথম। এরপর থেকে একসঙ্গে পথচলা।

২০১৬ সালে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাইয়ে যেবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবার মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ, সেবার মাঠে এই দুজনের পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। একাই ৮ গোল করেছিলেন কৃষ্ণা। সানজিদা তো ২০১৪ সালের আসরে জায়গা করে নেন এশিয়ার সেরা সাতে। ২০১৬ সালেও সবার নজর কাড়েন। সেই আসরের পর থেকেই মেয়েদের নিরবচ্ছিন্ন ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফে। এক ছাদের নিচে বন্ধু তারা সবাই। কিন্তু কৃষ্ণা-সানজিদার বোঝা পড়া একটু বেশিই।

‘ছোট বোন’ সানজিদা

কৃষ্ণার কাছে সানজিদার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা জানতে চাইতেই খানিক হাসলেন। জানালেন দুজনের পরিচয়ের কথা। শুরুতে ছোট বোন হিসেবে সানজিদাকে স্নেহ করতেন কৃষ্ণা, “ও আমার ছোট বোন…। সেই হিসেবে ওকে অনেক বেশি কেয়ার করা হয়।”

দুজনে আসলে সমবয়সীই। তবে কৃষ্ণা একটু বড়। তা ছাড়া সানজিদার এক বছর আগেই বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলে খেলা তার। কৃষ্ণা বলেন, “ছোট বোন বলতে, ও তো আমার একটু ছোট। এজন্য ওকে খুব আদর করতাম। এরপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব। শুরুতে আমরা রুমমেট ছিলাম।”

কৃষ্ণাকে ভয়!

সানজিদা কৃষ্ণাকে ডাকেন কৃষ্ণা দি বলে। বন্ধু কৃষ্ণা দি-কে নাকি শুরুতে অনেক ভয় পেতেন সানজিদা। দুজনের পরিচয়ের কথা সানজিদার মুখ থেকে জানতে চাইলে এমন মজার তথ্যই দেন সানজিদা। উইংয়ে খেলা এই তারকা বলেন, “আমি শুরুতে কৃষ্ণা দিকে অনেক ভয় পেতাম। ২০১৪ সালে প্রথম যখন আমি ক্যাম্পে এলাম, তখন কৃষ্ণা দি’র সঙ্গে একসঙ্গে একই রুমে ছিলাম। ছোট বলে কৃষ্ণা দি আমাকে দিয়ে কাজ করাতো (হেসে)। বলতো বুটটা আনো তো… এই সব! আমার করতে ইচ্ছে করত না। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না।”

হোস্টেলে বড়রা ছোটদের দিয়ে যেমন কাজ করিয়ে নিতে চায়, কৃষ্ণা এমনই চাইতেন। সানজিদার এই অভিযোগের কথা শোনে কৃষ্ণা হেসে খুন। সানজিদা জানান, তাদের বন্ধুত্ব গাড় হয় আসলে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসির সেই বাছাই আসর থেকে।

মাঠের বোঝাপড়া

মাঠের বাইরে ভালো বন্ধু। এ কারণেই কি মাঠেও দারুণ বোঝাপড়া? কৃষ্ণা বলেন, “এটা ঠিক জানি না। তবে মাঠে বোঝাপড়াটা আমাদের বেশ ভালো।” সানজিদা বলেন, “এটা আসলে আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করি। অনেক দিন একসঙ্গে খেলি বলে সবার সঙ্গেই সবার বোঝাপড়া ভালো।”

একে অপরকে মূল্যায়ন

বন্ধু সানজিদা কেমন- কৃষ্ণার কাছে জানতে চাইতে উত্তর- “অনেক অনেক ভালো। ওর খেলাও অনেক ভালো লাগে আমার।” সানজিদা জানান, কৃষ্ণা শুরু থেকেই তাকে আলাদা চোখে দেখে, “শুরু থেকেই কৃষ্ণা দি অনেক বেশি কেয়ার নিত। এখনো আমার সব কথা কৃষ্ণা দি’র সঙ্গে শেয়ার করি। আমরা একসঙ্গে অনেক মজা করি।”