পানির দরে বেচাকেনা

বগুড়ার শেরপুরে গরু-খাঁসির চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রি!

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অগাস্ট ২০১৯ ১৫:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫২ বার।

বগুড়ার শেরপুরে পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি খাঁসির চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫টাকা থেকে ২০ টাকায়!। আর লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০টাকায়। এমনকি ক্রেতা না থাকায় গরু-খাঁসির চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রি দেয়া হয়েছে। এছাড়া মহিষ, গাভী, বকনার চামড়া বিক্রি হয় ১২০টাকা থেকে ১৭০টাকা দরে। যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় একেবারেই কম। এদিকে এবার চামড়ার বাজারে ধ্বস নামায় কয়েকশ’ ক্ষুদে মৌসুমী ও খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে কেউ কেউ লাভবান হলেও অধিকাংশ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের (ফড়িয়া) বিপুল অংকের টাকা লোকসান হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে। প্রতিবছর এই উপজেলায় স্থানীয়ভাবে প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় এবার একই পরিমান চামড়া মাত্র ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকায় কেনাবেচা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়ার দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যায়। এছাড়া চামড়ার তেমন ক্রেতাও নেই। তবে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক কম দামে কোরবানীর পশুর চামড়া কিনতে দেখা গেছে। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান, শামছুল হক, নাজিম উদ্দিন জানান, এবার রকমভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৫০০টাকা, খাঁসির চামড়া ৫ টাকা থেকে ২০টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া গাভী ও মহিষের চামড়া ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তারা আরও জানান, অনেক সর্তকতার সঙ্গে কম দামে চামড়া কিনেও শহরে বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েন। লাভের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চামড়া নিয়ে বসে থাকলেও আশানুরুপ দাম না পেয়ে কেনার চেয়ে অর্ধেক দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
এদিকে গোলাম রব্বানী নামের এক ব্যক্তি জানান, কোরবানির জন্য চারজন মিলে ৭০হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কেনেন। সারাদিন চামড়াটি বিক্রি করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত এক মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীর কাছে মাত্র ৩০০ টাকায় চামড়াটি বিক্রি করেন। অথচ গত বছর একই ধরনের চামড়া ৭০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয়েছে। জিল্লুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি জানান, ৬৫হাজার টাকা দামের ষাঁড়ের চামড়া শহরের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান। এছাড়া এবার খাঁসির চামড়া নেওয়ার ক্রেতাই যেন ছিলনা। অথচ গত বছর গরুর চামড়া কম দামে বিক্রি হলেও প্রতিটি খাঁসির চামড়া ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তাই এবার বকরি ও ভেড়ার চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই গরু চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিয়েছেন। তবে রকমভেদে অনেক এলাকায় ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। মাসুদুর রহমানসহ কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, এবার চামড়ার বাজারদর পড়ে যাওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দিনের প্রথম ভাগ থেকে বিকেল অবধি চামড়ার বাজারে বেচাবিক্রি চললেও সন্ধ্যার পর থেকে যেন বেচাকেনা থমকে দাঁড়ায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার বাজার ক্রমেই কমতির দিকে যায় বলে এসব ব্যবসায়ী জানান।
চামড়ার বাজার ধসের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল গফুর নামের এক চামড়ার বড় আড়ৎদার জানান, চামড়ার বাজার বছর বছর কমে আসছে। এবার আরো কমে এসেছে। এর প্রধান কারণ অনেক বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীর কোটি কোটি টাকা চামড়ার বকেয়া পড়ে রয়েছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। এসব বকেয়া টাকা বছরের পর বছর আটকে থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক পুঁজি সঙ্কটে পড়ে অসহায় হয়ে রয়েছেন। তাই জেনে বুঝে ব্যবসায়ীরা আর লোকসান দিতে রাজি নন। এছাড়া ব্যবসায়ীরা ওইসব বকেয়া টাকা না পেয়ে অনেকেই অন্যান্য বারের ন্যায় এবার চামড়া কিনতে পারেননি। আর এসব কারণেই এবছর চামড়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে বলে জানান তিনি।