পাওনা টাকা ছাড়া চামড়া বেচবেন না আড়তদাররা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট ২০১৯ ০৬:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০ বার।

সারাদেশে আজ শনিবার থেকে চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকরা। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তারা চামড়া কিনবেন আড়তদারদের কাছ থেকে। কিন্তু আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের মধ্যে যারা তাদের বকেয়া পাওনা নিয়মিত পরিশোধসহ লেনদেন ভালো করেছেন কেবল তাদের কাছেই চামড়া বিক্রি করবেন। অন্যান্য ট্যানারি মালিকের কাছে তারা বিক্রি করবেন না।

তবে কয়েক বছর ধরে ১০ শতাংশ ট্যানারি মালিক ভালো লেনদেন করে আসছেন বলে জানান আড়তদাররা। এর বাইরে থাকা ট্যানারি মালিকরা ঠিকমতো লেনদেন করেন না। এ কারণে বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাদের চামড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আড়তদাররা। এদিকে চামড়া খাতেরকারসাজি ও চলমান সংকট উত্তরণে আগামীকাল রোববার এ খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্তের ওপর চামড়ার ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। আড়তগুলোর বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি এই বৈঠকে সমাধান হওয়ার কথা রয়েছে। এটি হলে পরে সব ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন আড়তদাররা।

আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, যেসব ট্যানারি ঈদের আগে বকেয়া পরিশোধ করেছে এখন কেবল তাদের চামড়া দেওয়া হবে। আড়তদারদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই বৈঠকে সব জেলার আড়তদারদের প্রতিনিধিরা আসছেন। তারা তাদের দাবি তুলে ধরবেন। সবার সমস্যা সমাধান হলে তখন চামড়া বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চামড়া শিল্পনগরীর সবচেয়ে বড় ট্যানারি রিলায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, শনিবার থেকে চামড়া কেনা শুরু করবেন তারা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সব এলাকায় চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকরা। আজ ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের হাটে চামড়া কিনতে তার প্রতিনিধিরা যাবেন। অন্যান্য ট্যানারিও চামড়া কিনতে বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রতিনিধিদের পাঠাবে। তিনি জানান, চামড়া কেনার জন্য তার মতো উৎপাদনে থাকা ট্যানারিগুলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও তাদের হাতে গত বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চামড়া মজুদ আছে। এর পরও মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী এ খাত টিকিয়ে রাখতে চামড়া কিনবেন তারা।

শুধু রিলায়েন্স নয়, উৎপাদনে থাকা ও ভালো লেনদেন করছেন এমন ট্যানারির মধ্যে এপেক্স, বে, ভুলুয়া, কালাম, আমিনসহ বেশ কয়েকটি ট্যানারি মালিক আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করেছেন। এসব ট্যানারি চামড়া কেনার বিষয়ে যোগাযোগ করেছে বলে জানান আড়তদাররা। তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে প্রস্তুত আছেন ওই আড়তদাররা। তবে আড়তদার মো. হানিফ সমকালকে জানান, আমার টাকা পাওনা আছে চারটি ট্যানারির কাছে। টাকা পরিশোধ না করলে তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করব না। এবার কম চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর পরেও অবিক্রীত চামড়া থাকলে তা রফতানি করতে প্রস্তুত আছেন বেশিরভাগ আড়তদার।

জানা যায়, দেশে প্রায় আড়াইশ'র মতো ট্যানারি থাকলেও বর্তমানে কেবল সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ১২৩টি ট্যানারি চালু রয়েছে। এখানে ১৫৫টি ট্যানারি চালুর কথা থাকলেও বাকিগুলো এখনও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। তবে চালু থাকা এই ট্যানারিগুলোর সক্ষমতা দেশে উৎপাদিত চামড়ার চেয়ে বেশি রয়েছে। তবে রফতানির বাজার মন্দা থাকায় অনেক ট্যানারি চালুর পরও বর্তমানে উৎপাদনে নেই। রফতানিতে দুরবস্থার কারণে ঝুঁকি নিতে চাননি কিছু কিছু ট্যানারি মালিক। তারা চামড়া কেনার উদ্যোগ নেননি। এ কারণে এবার চামড়ার বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়নি। এতে দাম কমে যাওয়ায় এবার এক কোটির বেশি কোরবানির পশুর চামড়ার অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা চামড়া এখন কেনা শুরু করছেন ট্যানারি মালিকরা। 

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের সমকালকে বলেন, যাদের টাকা আছে কেবল তারাই চামড়া কিনবেন। যাদের টাকা নেই তারা কিনবেন না। তা ছাড়া এবার অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। এরপরও যে চামড়া আছে তা কেনার মতো অনেক ট্যানারি মালিক রয়েছেন। এতে কাঁচা চামড়া রফতানির প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, এখন সব ট্যানারি একসঙ্গে চামড়া কিনবে না। কিছু কিছু ট্যানারি কিনবে। বাকিরা আগামী তিন মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে কিনবে। লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা চামড়া এখন নষ্ট হবে না। আরও এক সপ্তাহ পরই মূলত চামড়া বাছাই শুরু হবে। এর পরে মান অনুযায়ী চামড়া কেনাবেচা হবে। আবু তাহের বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে বিদেশি ক্রেতা হারানোয় এখন চামড়ার দুরবস্থা চলছে। এ ক্ষেত্রে দেশের সম্পদ রক্ষায় চামড়াজাত পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। তাহলে স্থানীয় বড় বাজারে দেশি চামড়া ব্যবহার বাড়বে। তখন দেশের চামড়ার দাম বাড়লে নষ্ট হবে না।