ডায়াবেটিস রোগীদের ডেঙ্গু হলে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট ২০১৯ ১৩:৫৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৯ বার।

গত বছর পর্যন্ত বিশেষজ্ঞগণের ধারণা ছিল ডেঙ্গুজ্বর শহরের, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ঢাকার একটি মশাবাহিত রোগ। কিন্তু এবার ডেঙ্গু সারা বাংলাদেশের মারাত্মক রোগ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী প্রায় সব দেশের মানুষের জন্য এবার ডেঙ্গু চরম হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

সব বয়সের পুরুষ-মহিলাই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছেন। তবে, মৃত্যুঝুঁকি বিবেচনা করলে শিশুরাই সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, শিশুদের সংখ্যা এতে উপরের দিকে। আর যারা ইতিমধ্যে অন্য কোনো রোগে ভুগছেন, তাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে মারাত্মক শারীরিক অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ তালিকায় রয়েছে ডায়াবেটিস, কিডনি ফেইলুর, হার্ট ফেইলুর ইত্যাদি। গর্ভকালীন ডেঙ্গু জ্বর মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। এদিকে বাংলাদেশে এক কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে ভোগছেন, যাদের কমপক্ষে ৩০% আবার কিডনি রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজের কারণে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, পানি শূন্যতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয় (রক্তের গ্লুকোজ কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে বেশি) তাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে ক্ষতির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থেকে যায়। ডেঙ্গু রোগের মৃত্যুর কারণ প্রধানত ডেঙ্গু শক সিন্ড্রেমের (ডিএসএস) জন্য হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণা এটি নিশ্চিত করেছে, ডায়াবেটিসের রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এদের মাঝে মৃত্যু হারও অনেক বেশি। ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। তবে ডায়াবেটিসের যে সব রোগী মেটফরমিন সেবন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর তীব্রতা কম হয় বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়ছে। ডায়াবেটিসের সব রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসা নিতেই হবে। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয়, তাদের ডেঙ্গু জরের এ মৌসুমটিতে অন্তত যতটা সম্ভব ভালো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এতে তার জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে। আর ডায়াবেটিস নিয়ে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে আর দশ জনের মতো না ভেবে, ঝুঁকি মনে রেখে, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিতে। এর জন্য একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দরকার হবে।

ডা. শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।