মৃত্যুর আগেই কবরস্থানে বসবাস

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অগাস্ট ২০১৯ ১৫:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩০ বার।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের মিটুয়ানী গ্রামের যমুনা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব ৩টি পরিবারের ১৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ১ মাস ধরে স্থানীয় একটি কবরস্থানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই যেন মৃত্যুর আগেই কবরবাস।

মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তারা শত বছরের পুরোনো মিটুয়ানী কবরস্থানেই টিনের ঝুপরি ঘর তুলে শিশু সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। খবর দেশ রুপান্তর।

তবে এলাকাবাসীরা জানান, শুধু এই ৩ পরিবারের আশ্রয়টুকুই নয় ৫ বছরে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভুতেরমোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার সাড়ে ৪ হাজার ঘরবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, ৩টি মসজিদ, ২ হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

বিশেষ করে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যমুনা ভাঙনে মিটুয়ানী ও খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে শত শত মানুষ তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে।

এ বিষয়ে কবরস্থানে আশ্রয় নেওয়া বয়োবৃদ্ধ আতর আলী (৭৫) জানান, কবরস্থানে বসবাস ধর্মীয় বিধান বহির্ভূত হলেও কোন পথ না পেয়ে আমরা নিরুপায় হয়েই এখানে ঘর তুলে বসবাস করছি। এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে আমরা কোথায় যাব।

তিনি আরো জানান, এক সময় একা একা কবরস্থানের পাশে দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় পেতাম। আর এখন বাধ্য হয়ে সেই কবরস্থানের ভেতরে বসবাস করছি।

এ বিষয়ে খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বর রবিউল ইসলাম জানান, বাড়ি হারানো এ পরিবারগুলোকে মানবিক কারণেই কবরস্থান থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত তাদের পুনর্বাসন প্রয়োজন।

এ বিষয়ে খাসপুখুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার জানান, এ সব ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তারা বিভিন্ন স্কুল কলেজের মাঠ, পরিত্যক্ত জায়গা ও ওই কবরস্থানের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু তাহির জানান, মিটুয়ানী কবরস্থানের ভেতরে কয়েকটি পরিবার ঘর তুলে বসবাস করছে শুনেছি। বসতভিটা যমুনা নদীতে বিলীন হওয়ায় তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে তাদের সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। ব্যবস্থা হলে কবরস্থান থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।