ট্রাক্টর তৈরির কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএসইসি

বগুড়ায় ভারী শিল্পের জন্য কেনা ১৫ একর  জমি ৪০ বছর পড়ে আছে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩১ অগাস্ট ২০১৯ ১৩:০৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৬৫ বার।

বগুড়ায় ভারী শিল্পের জন্য কেনা ১৫ একর জমিতে গেল ৪০ বছরেও কোন কলকারখানা গড়ে উঠেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাঁকা ওই জায়গায় ‘কি করা হবে, কি করা যায়’ তা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে শুধু আলোচনাই চলছে। ফলে যাদের জমি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সেই বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি) এখনও পর্যন্ত কোন কিছইু স্থির করতে পারেনি। ফলে মূল্যবান ওই জায়গাটি অব্যবহৃতই থেকে গেছে।
সম্প্রতি বগুড়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, শহরের ছয়পুকুরিয়ায় ভারী শিল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টরসহ নানা ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। তার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শিল্পের জন্য কেনা ওই জায়গায় নতুন কোন উদ্যোগের কথা আবারও সামনে এসেছে। 
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ধরনের পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। এটি কবে নাগাদ চুড়ান্ত হবে কিংবা আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কি’না সেটি বিএসইসি বা শের-ই-বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
গেল শতাব্দীর ষাটের দশকে বগুড়ায় কটন স্পিনিং মিল, বিড়ি কারখানা, সাবান ফ্যাক্টরী, ট্যোবাকো কোম্পানি, গ্লাস ও আয়রন ফ্যাক্টরী এবং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ অর্ধশত কলকারখানা গড়ে ওঠে। যে কারণে তখন সারাদেশে বগুড়া শিল্পনগরী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায়। এছাড়াও অনেক কুটির শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। ফলে ১৯৬৪ সালে বগুড়া শহরের ফুলবাড়িতে ১৪ দশমিক ৫ একর জায়গা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। তবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৭৯টি প্লটের সবগুলো দ্রুত বরাদ্দ হয়ে যায়।
শিল্প কলকারখানার ব্যাপক চাহিদা এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে ১৯৮০ সালে বগুড়া-সান্তাহার সড়কের পাশে ছয়পুকুরিয়া মৌজায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে ফুলবাড়ি এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের জন্য সেখানে নতুন করে আরও ১৮ দশমিক ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮১ সালের শুরুতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএসইসির ভারী শিল্প প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি নিহত হওয়ার পর সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আরও দু’বার ক্ষমতায় থাকলেও ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে শিল্পের জন্য কেনা ও জায়গায় ধানের আবাদ চলতে থাকে। 
ওদিকে দ্বিতীয় দফা সম্প্রসারণের পর বিসিক শিল্পনগরীর সবগুলো প্লট বরাদ্দ শেষ হয়ে গেলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা জায়গার অভাবে আবাসিক এলাকা এবং কৃষি জমিতে একের পর এক শিল্প কলকারখানা গড়তে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় উদ্যোক্তা বিশেষত ফাউন্ড্রি ও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারীরা দ্বিতীয় বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের দাবি তোলেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিসিকের পক্ষ থেকে ভারী শিল্পের জন্য বিএসইসির অধিগ্রহণ করা ওই জায়গায় ‘দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী’ প্রতিষ্ঠার জন্য বিসিকের পক্ষ থেকে ১৯৯৮ সালে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারও প্রায় পাঁচ বছর পর ২০০৫ সালে বিসিকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। 
ওই সময় বিসিকের পক্ষ থেকে তৈরি করা এক প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল বিএসইসির পড়ে থাকা ওই জায়গায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে সেখানে নতুন করে অন্তত ১০৪টি শিল্প ইউনিট গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যাতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল যে বিএসইসি এবং বিসিক একই মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর জন্য সহজেই জায়গাটি পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএসইসি তাতে রাজি হয়নি। ফলে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরীর সম্ভাবনাও মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ২০১৬ সালের শেষ দিকে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গায় সীমানা প্রাচীর তোলা শুরু করে। তখন থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে সেখানে নতুন কিছু হতে যাচ্ছে।
বিএসইসি’র উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল মেশিনারী মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বামমা) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু বলেন, ভারী শিল্পের জায়গাটি প্রায় ৪০ বছর ধরে পড়ে আছে। এর আগে সেখানে দ্বিতীয় বিসিক শিল্প নগরী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। বগুড়ায় কৃষি ভিত্তি শিল্পের চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার উদ্যোক্তারা শিল্পের জন্য জায়গা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই আবাসিক এলাকায় কিংবা ধানী জমিতে কলকারখানা গড়ে তুলছেন। যদি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ সত্যিই সেখানে ট্রাক্টরসহ কৃষি যন্ত্রাপাতি তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয় তাহলে সেটি অবশ্যই বগুড়াসত উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য ভাল হবে।’ তিনি কৃষি ভিত্তি শিল্পে নিয়োজিত বগুড়ার দক্ষ শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বগুড়ায় কৃষি ভিত্তিক শিল্পের দক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি এখাতের ভাল উদ্যোক্তাও রয়েছেন। তারা সবাই সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সেক্ষেত্রে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সহায়তা নিতেন তাহলে ভাল হতো।’
যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বগুড়ায় তাদের জায়গায় কৃষি যন্ত্রাংশের কারখানা নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক গবেষণা করছেন। তাদের গবেষণার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বশিরুল  ইসলাম জানান, তাদের কয়েকজন শিক্ষক এরই মধ্যে বগুড়া সফর করেছেন এবং আগামীতে তারা আবারও বগুড়া যাবেন।