৫ হাজার টাকার জন্য মাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে বগুড়ার খোকন

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৬৩ বার।

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘরের ভিতর হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন পুড়িয়ে খুকি খাতুন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ মাকে নির্মাম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে মাদকাসক্ত ছেলে সোহানুর রহমান খোকন মন্ডল (৩২)। রবিবার বিকেলে চিকাশী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও গ্রামবাসী জানান, গজারিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডল ও খুকি খাতুনের কনিষ্ঠপুত্র সোহানুর রহমান খোকন মন্ডল। সবার ছোট হওয়ায় বাবা-মায়ের প্রিয় ছিল খোকন। ছাত্র জীবনে বখে যাওয়া খোকন স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি। সে দীর্ঘদিন যাবত মাদক সেবনে অভ্যস্থ। এক পর্যায়ে বখে যাওয়া খোকনকে সংসারে মনযোগ বৃদ্ধি করতে বিবাহ করানো হয়। দ্যাম্পত্য জীবনে সে দুই সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু জীবনকে কর্মমূখী করতে পারেনি খোকন। অন্যদিকে ব্যবসা, খামার ও বিভিন্ন কাজ শুরুর কথা বলে পরিবার থেকে দফায় দফায় টাকা হাতিয়ে নিয়ে মাদক সেবনে ব্যয় করেছে। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেই তার বাবা-মাকে নির্যাতন করতো খোকন মন্ডল। এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার স্ত্রীও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করে দু’সন্তানকে নিয়ে খোকনের স্ত্রী বাবার বাগি চলে গেছে। 

প্রতিবেশিরা জানান, খোকন প্রায়ই নেশার টাকার জন্য বাবার কাছে বায়না ধরতো। কিন্তু টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে মাকে ঘরের মধ্যে জিম্মি করে অস্ত্র দেখিয়ে বাবাকে ভয় দেখাতো। বাধ্য হয়ে আব্দুস সামাদ মন্ডল টাকা ম্যানেজ করে ছেলের কাছ থেকে স্ত্রী খুকি খাতুনকে উদ্ধার করতেন। গত বছর মাদক সেবনের অভিযোগে খোকন মন্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। কয়েক দিন কারা ভোগের পর বাড়ি ফিরে আবারো মাদকসেবন শুরু করে। সে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত। মাদকাসক্ত ছেলের হাত থেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন আব্দুস সামাদ মন্ডল। ২০১৮ সালে কৌশলে খোকন মন্ডলকে পুলিশে ধরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু কারাগারে সাক্ষাতের সময় স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখালে আব্দুস সামাদ মন্ডল বাধ্য হয়ে খোকনের জামিনের ব্যবস্থা করেন। ছেলের মাদকসেবনের ব্যয় মিটাতে তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমি খুইয়েছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববার বিকেল ৪টায় ঘরের মধ্যে মাকে বন্দি করে খোকন মন্ডল। এরপর তার বাবার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করে। কিন্তু তার বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হাসুয়া (দেশীয় অস্ত্র) দেখিয়ে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সামাদ মন্ডল টাকা সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে ধর্না দেন। কিন্তু তিনি টাকা ম্যানেজ করতে পারেনি। এদিকে বাবা টাকা নিয়ে বাড়ি না ফেরায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে খোকন। নিজের মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল বের করে নিয়ে যায় ঘরে। ওই ঘরে মায়ের হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। তারপর মায়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখে প্রতিবেশিরা ধাওয়া করে খোকন মন্ডলকে আটক করে। পরে তারা ওই ঘরে গৃহবধু খুকি খাতুনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। এসময় স্থানীয় লোকজন খোকন মন্ডলকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। অন্যদিকে দগ্ধ খুকি মন্ডলকে চিকিৎসার জন্য ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নেওয়ার পথে রাত ৮টায় খুকি খাতুন ইন্তেকাল করেন। 

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত খোকন মন্ডল ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে পেট্রোল ঢেলে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় মায়ের চিৎকারের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে মায়ের মুখে কাপড় বুজে দেয় এবং ঘরের উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্সে গান বাজানো হয়। স্থানীয় লোকজন ওই বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নেওয়ার পথে রাত ৮টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। সোমবার ময়না তদন্ত শেষে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছেলে খোকন মন্ডলকে আটক করা হয়েছে। গণধোলাই এ আহত হওয়ায় পুলিশ হেফাজতে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।