শেরপুরে মাত্র ২৬ হাজার টাকায় স্কুল ভবন বিক্রি!

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৭ বার।

বগুড়ার শেরপুরে টুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও মালামাল গোপনে মাত্র ২৬হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব মহলকে ম্যানেজ করে নিয়ম ভেঙে প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই নামমাত্র মূল্যে এই ভবনটি ক্রয় করেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। পরে তিনি আবার ওই ভবন ও মালামালগুলো দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর গেল দুইদিন ধরে বেশকয়েকজন শ্রমিক ওই ভবনটি ভাঙা শুরু করলে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নিলামের বিষয়টি জানাজানি হয়। ফলে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঢোল বাজিয়ে কিংবা মাইকযোগে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নিলামের কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এমনকি গণমাধ্যমেও কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। ঈদ পরবর্তী ছুটি ও ব্যস্ততাকে কাজে লাগিয়ে কাগজ-কলমে নিলাম দেখিয়ে সম্পুর্ণ গোপনে এই কাজটি করা হয়। তবে লক্ষাধিক টাকার ওই ভবনটি কীভাবে এত অল্প টাকায় বিক্রি করা হলো তা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩১সালে উপজেলার টুনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উদ্যোগে তিনটি ক্লাসরুমসহ চাররুম বিশিষ্ট ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এরপর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ২০১০সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পাশেই আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করে সেখানেই পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। তাই বিদ্যালয়টির পরিত্যক্ত ওই ভবন ও মালামালগুলো গত ১৮আগস্ট নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এরআগে নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য স্কুলে চিঠি পাঠানো হয়। তবে শিক্ষা অফিস থেকে কোন চিঠি পাননি বলে দাবি করে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফা খাতুন বলেন, নিলাম প্রক্রিয়ার সবকিছুই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস করেছে। আমাকে কেবল একটি রেজুলেশন পাঠাতে বলা হয়েছিল। আমি তাই করেছি। এর বাইরে আর কিছু জানা নেই বলে এই প্রধান শিক্ষক জানান। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী বলেন, এই নিলামের কোন প্রকার প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে সম্পুর্ণ গোপনে নামমাত্র মূল্যে ওই ভবন ও মালামালগুলো ক্রয় করে নেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চার-পাঁচজন শ্রমিক ওই ভবন থেকে টিন ও রড খুলছেন। একইসঙ্গে স্কুলের ফাকা মাঠে স্তুপ করে রাখছেন। এসময় কথা হয় ওইসব শ্রমিকদের সঙ্গে। তারা বলেন, উপজেলার বাগড়া গ্রামের নয়ামিয়ার ছেলে মিলনুর রহমান এই ভবন ও ভবনের মালামাল তাদের মহাজন আব্দুল আজিজের কাছে বিক্রি করেছেন। আর সেই মহাজনের নির্দেশে তারা কেবল ভবনটি ভাঙার কাজ করছেন বলে জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মের্সাস ফয়সাল ফাহিম ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ও ভবনটির ক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, মিলনুর রহমান নামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে দেড় লাখ টাকায় চাররুম বিশিষ্ট এই ভবন ও ভবনের মালামালগুলো কেনেন। তিনি সরকারিভাবে নিলাম ডাকের মাধ্যমে পেয়েছেন বলে শুনেছি। তবে মিলনুর রহমান কত টাকায় ওই ভবনটি নিয়েছেন তা জানেন বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে মিলনুর রহমান জানান, নিলাম ডাকে অংশ নিয়ে পরিত্যক্ত স্কুল ভবনটি ক্রয় করেছি। এতে দোষের তো কিছু দেখছি না। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গেও কথা বলা হবে-এই বলে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনা খাতুন জানান, এ কর্মস্থলে নতুন এসেছি। তাই অনেক কিছুই জানি না। তবে নথিপত্র ঘেটে দেখা যায় যথাযথ নিয়ম মেনেই নিলাম দেয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত ওই ভবনটির সরকারি মূল্য ধরা হয় ২৫হাজার ২০০টাকা। মোট তিনজন ব্যক্তি এই নিলাম ডাকে অংশ নেন। উপস্থিত ডাক কারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হিসেবে মিলনুর রহমান ২৬হাজার ২০০টাকা বলায় তাকেই দেয়া হয়েছে। পরে সাতদিনের মধ্যে ভবন ও মালামাল অপসারণ করার জন্য তাকে চিঠি দেয়া হয় বলে এই কর্মকর্তা জানান। বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, সরকারি স্থাপনা নিলামের ক্ষেত্রে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি গণমাধ্যমেও বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। তাই এই নিলামের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।