যেভাবে ৭০ বছর আগের প্রেমপত্র ফিরে পেলেন প্রেমিকা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১১ বার।

সত্তর বছর আগের লেখা প্রেমপত্র ফেরত পেলেন প্রেমিকা। এক ব্রিটিশ নাগরিক চিলিকোঠা পরিষ্কার করতে গিয়ে চিঠিগুলো খুঁজে পান।

বিবিসি বাংলা জানায়, কিম রোয়ি নামে এক ব্রিটিশ নাগরিক চিঠিগুলো খুঁজে পান। এসব চিঠি লেখা হয়েছিল ১৯৪৮ এবং ১৯৯৪৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

চিঠিগুলোর প্রাপক এবং প্রেরক কেন্টে থাকা নরমা হল এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে দেশের বাইরে কাজ করা বব বিয়াসলে।

কিম জানান, তা মা চেরি ভ্যালেন্স ২০ বছর আগে আলদেরশটে থাকতেন। সেখানে তার এক প্রতিবেশী চিলেকোঠার ঘরে এই চিঠিগুলো পান এবং ফেলে দিতে চান।

তিনি বলেন, “আমার মা সেগুলো দেখতে পান এবং আবিষ্কার করেন সেগুলো প্রেমপত্র। সেগুলো রাস্তার ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলে দিতে সায় দিল না আমার মায়ের মন।”

কিমের মা চেরি যখন বাসা বদল করে সমারসেটে চলে যান, সেই চিঠিগুলোও সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি ২০১৬ সালে মারা যান। ফলে চিঠির মালিক নরমা হল এবং বব বিয়াসলেকেও তার পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এই বছর চিঠিগুলো চেরির ছেলে কিমের নজরে আসে। তখন তিনি ভাবলেন, এবার আর দেরি নয়। চিঠিগুলোর প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করতে হবে এবং এগুলো তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

কিম বলেন, “আমি মাত্র দুটি চিঠি পড়েছি শুধু তথ্য নেওয়ার জন্য। বাকিগুলো পড়িনি কারণ আমার মনে হয়েছে এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। বব নিশ্চয় নরমাকে অনেক ভালোবাসতে। আর চিঠিগুলো সংরক্ষণ করতো নরমা।”

 

এ দিকে চিঠির মালিককে খুঁজে বের করতে কিম একটি চিঠির খাম ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। কিমের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওই পোস্ট ১১ হাজার বার শেয়ার হয়, ১৫০০ কমেন্ট পড়ে।

একপর্যায়ে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার বিষয়ে তথ্য আসতে থাকে। যার মধ্যে একজন ফেসবুকে লিখে জানান, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই দম্পতি ১৯৫১ সালে আক্সব্রিজে বিয়ে করেছেন। সেই সূত্রেই খুঁজে পাওয়া গেল নরমা বিয়েসলিকে।

১৯৪০ এর দশকে নরমা বিয়েসলির সঙ্গে যখন ববের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তখন এই নারীর বয়স ছিল ১৮ বছর। বন্ধুত্ব থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। পরবর্তীতে তারা বিয়েও করেন।

নরমার বয়স এখন ৮৮। চিঠিগুলো যখন তার হাতে পৌঁছায়, তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কারণ কয়েক মাস আগেই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মারা গেছেন বব।

তারা বন্ধু ছিলেন পরে তাদের সম্পর্ক এক দীর্ঘস্থায়ী রোমান্টিক সম্পর্কে গড়ায়। নরমার বয়স এখন ৮৮।

নরমা বিবিসিকে জানান, বব যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন তখন নরমা তার মা-বাবার বাড়িতে থাকতেন। বব মধ্যপ্রাচ্য এবং মিশর থেকে ফিরে আসার পরেই তারা বিয়ে করেন এবং ১৯৫১ সালে বাকিংহ্যামশায়ারে এক গ্রামে চলে যান।

 

সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে বব কাঠ মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন আর নরমা একটা অফিসে কাজ নেন। কিন্তু বিয়ের আগের সেই প্রেমপত্রগুলোর কথা তারা ভুলে গিয়েছিলেন। সেগুলো কোথায় ছিল সেই ধারণাও তাদের ছিল না।

এই যুগলের ৫ সন্তান এবং ৬ জন নাতি-নাতনি রয়েছে। ৭০ বছর আগের চিঠিগুলো ফিরিয়ে পেয়ে নরমা তাদের পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করছিলেন।

তিনি বলেন, “আমরা শুরুতে বন্ধু হিসেবে পরস্পরকে চিঠি লেখা শুরু করি। তারপর এটা বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে গেল।”

নরমা বলেন, “সে তার জীবন সম্পর্কে বলত আর আমি বলতাম আজ বাড়িতে কী হয়েছে। আমি মনে করি মিশরে তার জীবন আমার জীবনের চেয়ে বেশি মজার ছিল। আমি চিঠি লিখতে পছন্দ করতাম না কিন্তু প্রতি সপ্তাহে আমি তাকে একটা চিঠি লিখতাম এবং একটা ম্যাগাজিন পাঠাতাম।”

যদিও তিনি চিঠিগুলো পেয়ে খুশি হয়েছেন কিন্তু যেহেতু বব আজ আর বেঁচে নেই তাই তিনি চিঠির খামগুলো খুলতেও আজ আর সাহস পাচ্ছেন না।

“চিঠিগুলো আগের মতোই রঙিন কাগজে মোড়ানো আছে আমি যেমনটা করে পাঠাতাম। কিন্তু এখন আমি আর সেগুলো পড়তে পারব না”, বলেন নরমা।