মালিক ২৫ জন হলেও ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে ১২জনকে

নওগাঁয় পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৮৩ বার।

নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নওগাঁ সদরের চকপাথুরিয়া মৌজায় ৯১ নং দাগে যে ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ওয়ারিশসূত্রে তার প্রকৃত মালিক ২৫ জন হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের ন্যায্য পাওনা থেকে ৬ নারীসহ ১৩জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। 
অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যারা সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন শুধু তাদের নামেই গত ১৮ আগস্ট ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় গত ২২ আগষ্ট বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে রতন হোসেন নামে একজন নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্ত অদ্যাবদি এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করা অভিযোগ এবং আদালতে চলমান মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, নওগাঁ সদরের চকপাথুরিয়া মৌজায় ৯১ নং দাগের ওই জমির ক্রয় সূত্রে মালিক ছিলেন একই জেলা সদরের কুমাইগাড়ি গ্রামের মৃত দৌলত ম-লের ছেলে রহিম উদ্দিন ম-ল। রহিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী তার স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ওই জমির মালিকানা প্রাপ্ত হন। 
নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ প্রকাশিত রিভিশনাল সার্ভে বা আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও দুই মেয়ের নাম উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু সেটেলমেন্ট দপ্তরের ভুলে আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের শুধু দুই ছেলে আমির উদ্দিন ম-ল ও আব্দুর রাজ্জাকের নাম প্রকাশ পায়। বিষয়টি জানার পর ২০১১ সালে নওগাঁ প্রথম সাব জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা (নং ৫৯/১১) মামলা করা হয়। মামলায় মৃত রহিম উদ্দিনের একমাত্র জীবিত কন্যা লাইলী বেগম এবং তার মৃত দুই ভাই-বোনের ১২ সন্তান পক্ষভুক্ত হন।
ওই মামলার বাদী পক্ষের একজন লাইলী বেগম জানান, স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে চক পাথুরিয়া মৌজার ৯১ দাগের সেই ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের কথা জানিয়ে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি প্রথম নোটিশ (এল এ কেস ১০/২০১৬-২০১৭) ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ জুন এবং ১১ জুলাই আরও দু’টি নোটিশ ইস্যু করা হয়। তখন তিনিসহ ১৩জন ওয়ারিশ ওই জমি নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান থাকার কথা জানিয়ে নওগাঁ ভূমি অধিগ্রহণ  অফিসারের কার্যালয়ে চিঠি দেন। তাতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা ওই জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ কাউকে পরিশোধ না করার অনুরোধ জানানো হয়। 
ওই চিঠির প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা কয়েক দফা শুনানী করেন। প্রায় দেড় বছর আগে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানীতে জয়া মারীয়া পেরেরা তাদের জানান, বাটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি কিংবা বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ কাউকে প্রদান করা হবে না। তবে পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার মারীয়া পেরেরা বদলী হয়ে যান এবং যোবায়ের হোসেন নামে এক কর্মকর্তা তার স্থলাভিষিক্ত হন।
লাইলী বেগমের অভিযোগ, যোবায়ের হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার হিসেবে যোগদানের পর তাকেও অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমি নিয়ে বাটোয়ারা মামলা বিদ্যমান থাকার কথা জানিয়ে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে বরং  তড়িঘড়ি করে গত ১৮ আগস্ট এক পক্ষের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোট ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
লাইলী বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে পৈতৃক সূত্রে আমরা তার মালিক। সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে নারীদের যাতে বঞ্চিত করা না হয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া বর্ণিত জমির বন্টন সংক্রান্ত বাটোয়ারা মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রকৃত ওয়ারিশদের এভাবে ক্ষতিপূরণ বাবদ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে তেমনি আদালতকেও অবজ্ঞা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় গত ২২ আগস্ট তার ভাতিজা রতন হোসন নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন জানিয়ে লাইলী বেগম বলেন, ‘আশাকরি এ ব্যাপারে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যথায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা হবে।’ 
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুজন) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন নবী বেলাল বলেন পুনরায় শুনানী না করে এক পক্ষকে ক্ষতিপুরুনের অর্থ পরিশোধ করা ঠিক হয়নি। অভিযোগ দ্রুত তদন্ত পূর্বক দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনসহ বঞ্চিতদের প্রাপ্য পরিশোধ করার দাবি জানান তিনি।
তবে নওগাঁ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার যোবায়ের হোসেন দাবি করেছেন, সঠিক নিয়ম মেনেই এবং আদালতের জিপির মতামত নিয়ে ক্ষতিপুরুনের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘এর পরেও বাদি পক্ষ যদি আদালতে মামলা করে রায় নিয়ে আসতে পারেন তখন পরিশোধিত অর্থ ফেরত এনে তাদের মাঝে বন্ঠন করা হবে।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি অতিব গুরুত্বের সাথে ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।