রাজশাহীতে মা-ছেলে হত্যায় আ’লীগ নেতাসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৮:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৫ বার।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় মা ও ছেলে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন মামলার রায়ে আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনের ফাঁসি ও চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বুধবার সকালে রাজশাহীর বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।

২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার দেউলা গ্রামের আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিহত আকলিমা বেগমের দেবর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন মাস্টার (৫৫), পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৫) ও একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে সাবেক বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫)।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- দুর্গাপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের ক্ষিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং ক্ষিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। এরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

আদালতসূত্রে জানা গেছে, জেলার বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে মা আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে পর দিন অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এর পর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্তে। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। শেষে ২০১৮ সালের ৩১ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

আসামিদের মধ্যে তিনজন গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তবে ফাঁসির সাজা পাওয়ারা এই জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী। বাকিরা ভাড়াটে খুনি।

মামলার বাদী নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন জানান, ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তারা বড় হয়ে ওঠেন।

২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চেয়েছিলেন।

এ নিয়ে চাচার সঙ্গে পারিবারিক কলহ শুরু হয়েছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে তার মা ও ভাইকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ রায়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করে দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলে আলোচিত এ মামলাটি রাজশাহী জেলা জজ আদালত থেকে বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলাটিতে ৫১ সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এর পর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার মামলার রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ বিচারক