নির্দেশ না আসলে গালমন্দ খেয়েও দায়িত্বে থাকব: জাবি উপাচার্য

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি নির্দেশ দেন তবে দায়িত্ব থেকে সরে যাব। যদি আমাকে নির্দেশ না দেন তবে আন্দোলনকারীদের গালমন্দ খেয়েও থেকে যাব। হয়তো তাদের আন্দোলন আরও দীর্ঘায়িত হবে কিন্তু নির্দেশ আসা না পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।

দুর্নীতির অভিযোগ এনে জাবি উপাচার্যকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ১ অক্টোবর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। আর এ সময়ের মধ্যে তিনি তার বাসভবনে থেকে রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। ভর্তি পরীক্ষার সময় তিনি কোনো একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ দিদার।

বুধবার তাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে আলোচনা থেকে বেরিয়ে উপাচার্য সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি উপাচার্য বলেন, জীবনে ৫০০ টাকার বেশি ঈদ সেলামি পাইনি। এতো (অভিযোগ উঠা ২ কোটি) টাকা আমি দেব কোথা থেকে?

তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি আমি ইউজিসি এবং প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তাছাড়া আমি কি পারি আর কি পারিনা সেটা অধ্যাদেশে বলা আছে। সেখানে নিজেই নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বলা নেই।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে আলোচনা শুরু হয়ে চলে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। প্রশাসনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক।

এছাড়া তাদের সহযোগিতার জন্য প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা মাহতাব-উজ-জাহিদ।

অপরদিকে মঙ্গলবার রাতে চার ঘণ্টার অধিক সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেনের মুঠোফোন অকার্যকর ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই অভিযোগে তিনি আলোচনা সভা বর্জন করেন।

তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি। তা সত্ত্বেও গতকাল আমার মোবাইল নম্বর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার ঘণ্টা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমি মনে করি এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রতিবাদস্বরুপ বিষয়টি রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছি এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করিনি।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে প্রায় ২২ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন।

লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, এই উপাচার্য নৈতিকভাবে পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ১ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে যদি তিনি পদত্যাগ না করেন তবে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে।

উল্লেখ্য, ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। ১ মে ৬টি হলের টেন্ডার আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। ৩০ জুন ৩টি ছেলেদের ও ২টি মেয়েদের আবাসিক হলের কাজ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

এই কাজের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডার সিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে। এছাড়া ঈদের আগে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ‘ঈদ সেলামি’ দেয়া অভিযোগ উঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবিসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে ১২ সেপ্টেম্বর আলোচনায় দুটি দাবি মেনে নেয় প্রশাসন। এছাড়া অপর দাবি ‘তদন্ত কমিটি গঠন’ নিয়ে বুধবার আলোচনায় বসে প্রশাসন ও আন্দোলনকারীরা।