ধামইরহাটে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র বিএনপির আভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব প্রকট

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:৩২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৫ বার।

নওগাঁর ধামইরহাটে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন কে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরিক দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুই গ্রুপের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এদিকে দুই গ্রুপের টানাটানিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা পড়েছে বেকায়দায়। এক্ষুনি দুই গ্রুপকে এক টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করতে না পারলে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।


জানা গেছে,গত ১৪ জুলাই তারিখে ধামইরহাট থানা ও পৌর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দেয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। পরবর্তীতে নওগাঁ জেলা থেকে থানা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলেও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই দুই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ওই সময় আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবীতে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। গত ২৯ আগষ্ট তারিখে সদ্য বিলুপ্ত থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান ফেরদৌস হাসানকে আহবায়ক মনোনীত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। থানা বিএনপির কমিটি গঠন করা হলেও এখনও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়নি। থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থানা বিএনপির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আহবায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আগামী ২৯ তারিখে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলন সফল করার লক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহিত হলেও সদ্য ঘোষিত আহবায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। তড়িঘড়ি করে সভা সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।

এদিকে আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবীতে গত বুধবার আলমপুর ইউনিয়নে কমিটি বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। বর্তমানে ধামইরহাটে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি মো.সামসুজ্জোহা খান এবং অপর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমানে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী। মূলত এই দুই নেতাকে কেন্দ্র করে দলে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া আহবায়ক কমিটিতে কার পক্ষের লোকজন বেশি স্থান পেয়েছেন এ নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।

মো.নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলয়ের নেতা বর্তমান থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য পৌর শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন,আমরা কোন গ্রুপ বুঝিনা সকলকে সাথে নিয়ে আগামী দিনে একটি শক্তিশালী থানা বিএনপির কমিটি করতে চাই। কাউকে দলের বাহিয়ে রেখে নয়। সাবেক এমপি সামসুজ্জোহা খানের অনুসারী সদ্য বিলুপ্ত থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো.আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে যারা কখনও বিএনপি করেনি তাদেরকে আহবায়ক কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। অনেকে বিগত নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট করেছেন। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি আমাদের সাথে আলোচনা না করে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির বির্তকিতদের বাদ দেয়া না করা পর্যন্ত আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

থানা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান ফেরদৌস হাসান বলেন,আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষে একটি গ্রহণ যোগ্য শক্তিশালী থানা বিএনপির কমিটি উপহার দিব। আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই আমার সকলে বিএনপির পরিবারের।

এব্যাপারে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন,বিগত নির্বাচনে আমি দলীয় প্রার্থীতা চেয়েছিলাম। কিন্ত পাইনি তারপরও দলীয় প্রার্থী মো.সামসুজ্জোহ খানকে বিজয়ী করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। যা বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা দেখেছেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নওগাঁ-২ (ধামইরহাট-পত্নিতলা) আসনের ৩ বারের সাবেক এমপি মো.সামসুজ্জোহা খান বলেন,জেলা বিএনপির আহবায়ক আমাদের সাথে কোনরুপ আলোচনা ছাড়াই আহবায়ক কমিটি গঠন করেছেন। শুধু তাই নয় বিগত নির্বাচনে যারা আমাদের বিপক্ষে কাজ করেছে তাদের কে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিগত আন্দোলনে যাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই তারা কমিটিতে স্থান পেয়েছে। যার ফলে তৃণমূল বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা এ কমিটি মেনে নিতে পারেনি। 


জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমান মাস্টার বলেন,থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে বির্তকিত কেউ থাকলে অভিযোগ করলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আহবায়ক কমিটি মাত্র স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। আমরা সকলকে সাথে নিয়ে গ্রহণযোগ্য কমিটি করতে চাই। বড় দলে মত পার্থক্য থাকবে। সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।