মধ্যরাতে বনানীতে শাবির ভিসিপুত্রের কাণ্ড!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:০৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০৪ বার।

মধ্যরাতে রাজধানীর বনানীতে বেপরোয়াভাবে প্রাইভেটকার চালিয়ে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ভিসিপুত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই তরুণ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ছেলে ফারহান আহমেদ।

শুক্রবার মধ্যরাতে বনানী এলাকায় সিগন্যাল অমান্য করে বাইক আরোহীকে চাপা দেন ভিসিপুত্র। এতে বাইকে থাকা নারী আরোহী ছিটকে পড়ে যান।

জানা যায়, ভিসিপুত্রের এ কাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। তবে ওই সময় ঘটনাটি দেখে নিজের মোটরসাইকেলে করে ভিসিপুত্রের গাড়িটি অনুসরণ করছিলেন রিয়াদুল হাসান রিমন নামে এক যুবক।

ভিসিপুত্র দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বনানী চেকপোস্ট সিগন্যাল অমান্য করে আবাসিক এলাকার নিজেদের বাড়িতে ঢুকে যান। পরে তার পিছু পিছু বাড়িটিতে হাজির হন ওই যুবক রিমন। এ সময় বিষয়টি ভিসিপুত্রের কাছে তার এমন কাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে রিমনকে হুমকি দেন তিনি।

একপর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানান রিমন। পরে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ সময় ভিসিপুত্র ফারহান ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

তবে এ ঘটনায় আহতদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি বনানী থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে বনানী থানার এসআই আশরাফ যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু এর কোনো সত্যতা পায়নি। কেউ আহত হয়েছে কিনা, তারও সত্যতা পাইনি। এখন ঘটনার সত্যতা না জানলে কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নেব।

ঘটনাস্থলে কিংবা আশপাশে সিটি ক্যামেরা তো রয়েছে? এমন প্রশ্নে এসআই কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি। বললেন, ভিকটিম যদি অভিযোগ করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবক রিমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ‘ভিসিরা কী ভগবান’ এই শিরোনাম স্ট্যাটাসটি দেন রিমন।

তার স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-

দাম্ভিক কারচালক। অবশ্য তাদের দাম্ভিক না বলে নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন মানব বলা যায়। কিছুদিন ধরে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির জঘন্য ও ঘৃণ্য আচরণ দেখে আমাদের গোটা সমাজ আঁতকে উঠেছিল। কখনও একজন ভিসির আচরণ এরকম কাম্য নয়। বেশ কিছুদিন ধরে এসব বিষয় নিয়ে কেবলই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ যখন নিজের চোখে এরকম জঘন্য কাজ দেখলাম তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।

ঘটনাটি রাত ১১টা ২০ মিনিটের সময় বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়ে। একজন ভদ্র লোক ও ভদ্র মহিলা মোটরসাইকেলে করে হয়তো তারা দু'জন স্বামী-স্ত্রী অথবা আপনজন। বন্ধের দিনে ঘুরতে বের হয়েছে। না হয় কেনাকাটা অথবা মার্কেট করতে। কিছু একটা হবে হয়তো। তাদের মোটরসাইকেলটি চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় দিয়ে ভেতরে ডুকতে গেলেই একটি কালো প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২২-৫৩৩৮) বেপরোয়া গতিতে সিগন্যাল অমান্য করে স্বজোড়ে ধাক্কা মারে এবং দু'জনে মারাত্মক আহত হয়। ঘটনা দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে গাড়িটি ধরতে পিছু নিলাম।

এদিকে আহতদের ট্রাফিক পুলিশ উদ্ধার করেন। আমি ছুটে চললাম কারটির পিছু পিছু। হঠাৎ ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামল, আমি ভদ্রতার সঙ্গে সালাম দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে বললাম। কিন্তু বেপরোয়া চালক কোনো কথা না শোনে উল্টো দিকে গাড়ি আবার দ্রুতগতিতে চালাতে লাগলেন। আবারও পিছু নিলাম। এবার গিয়ে গাড়ি থামালেন বনানীর রোড নং-৯, হাউজ নং-২০-এ।

আমি আবারও সালাম দিয়ে বললাম ভাই, আপনি দু'জন পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে কেন ফেলে চলে আসছেন? রাগান্বিত হয়ে আমাকে সেরকম হুমকি-ধমকি দিলেন। তিনি আরও বললেন জানেন আমি কে? আমি বললাম আপনি কে- তা দিয়ে আমি কী করব ভাই। ভিসিপুত্র বলেন- আমার বাবা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি। আমি বললাম আপনি তো ভাই একজন সম্মানিত বাবার সন্তান। কিন্তু আপনি এরকম বেপরোয়া গতিতে ও সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানো কী ঠিক? আপনি বলেন ভাই? এবার বাসা থেকে নেমে আসলেন ভিসি মহোদয়ের স্ত্রী। তিনি এসে তো মস্ত বড় এক লিস্ট শোনালেন। উনার স্বামীর কথা নাকি বনানী থানা এলাকার প্রশাসন চলে। আমি কেন উনার ছেলেকে ফলো করলাম এটা নাকি অন্যায় হয়েছে।

অবস্থার বেগতিক দেখে কল দিলাম জাতীয় সেবা সেন্টার ৯৯৯-এ। তারা দ্রুত ঘটনাটি আমলে নিয়ে বনানী থানার এসআই আশরাফ ভাইকে পাঠালেন এবং তিনি ঘটনাস্থলে এসে তার বিস্তারিত পরিচয় ও ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করেন। পরে উনিও বলেন, শাবিপ্রবির ভিসি মহোদয়ের ছেলে চালক ফারহান। সমস্যা নেই উনি ঘটনাটি দেখভাল করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।

শাবিপ্রবির সম্মানিত ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ আমাদের সবার শ্রদ্বেয়। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের উনি মানবিকতা শিক্ষা দেন। কিন্তু আফসোস উনার নিজের ছেলেকে সঠিক মানবিকতা শিক্ষা দিতে পারেননি।

স্ট্যাটাসের শেষে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেন, সবার মধ্যে মানবিকতা জাগ্রত হোক। আসুন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াই। ট্রাফিক আইন মেনে চলি। জরুরি সেবা ৯৯৯-কে বিশেষ ধন্যবাদ।

এ বিষয়ে জানতে শাবির ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে যুগান্তরকে তিনি জানান, এটি আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তিন ছাত্র তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার ছেলে ফারহান প্রাইভেটকার দ্রুত চালিয়ে বাসায় চলে যেতে সক্ষম হন।

ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভিসির মেয়াদ দুই বছর হয়ে গেলেই একটি চক্র তাকে বিদায় করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২শ' কোটি টাকা পেয়েছি প্রকল্পের ব্যয় বাবদ। এখন পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছি। টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে একটি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার ছেলের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এভাবে আমাকে ডিমোডিবেটেড করতে পারলেই টাকার ভাগ নিয়ে যাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে এভাবেই ডিমোডিবেটেড করা যাবে না। আমি কখনও আমার সততা এবং নিষ্ঠা থেকে পিছপা হব না।

ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। তারা একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে নিউজ করছে। কারও কোনো বক্তব্য নিচ্ছে না। এবং বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে বলছে- এই স্ট্যাটাস নিয়ে নিউজ করার জন্য, যোগ করেন শাবি ভিসি।

ভিসির এমন বক্তব্যের পর ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিয়াদুল হাসান রিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি যখন গাড়িটি ফলো করে তার বাসায় যাই, তখন ওই গাড়িটিই (ভিসিপুত্র ফারহানের গাড়ি) তাদের বাসার নিচে পার্কিংয়ে পাই। আমি তাকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আপনি এটা কোনো কাজ করলেন? রাস্তায় দুটি মানুষকে গাড়িচাপা দিয়ে আসলেন। যান তাদেরকে সহযোগিতা করেন’।

‘তখন সে দৌড়ে বাসায় লিফট থাকা সত্ত্বেও সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় আর বলে আম্মুকে নিয়ে আসতেছি। পরে তার আম্মু এসে আমার উদ্দেশে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলেন। একপর্যায়ে আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ আসলে সে (ফারহান) ঘটনার কথা স্বীকার করে। পরে তার মা আমাকে বলেন, দেখ বাবা আমার ছেলে ভয় পেয়েছে, তাই এমন করেছে।’