বগুড়া ব্যাটালিয়ন স্কুল ও কলেজর তিন শিক্ষার্থীর অভিনব আবিষ্কার

হাত ঘড়ি রুখবে বখাটেদের!

দোস্ত আউয়াল ও আকতারুজ্জামান সোহাগ
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪২৯ বার।

হাতে থাকা ঘড়ি ঘায়েল করবে বখাটেদের! কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো? হ্যাঁ এমনই অভিনব একটি হাতঘড়ি তৈরি করেছেন বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পাবলিক স্কুল ও কলেজের তিন শিক্ষার্থী। রোববার এপিবিএনে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান উৎসবে বিশেষ ধরণের ওই ঘড়ি প্রদর্শন করা হয়। মালিহা তাবাসসুম, রুকাইয়া বিনতে ইসলাম ও সাদিয়া ইয়াসমিন নামে দ্বাদশ শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর তৈরি করা ঘড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী ও শিশু নিরাপত্তা হাতঘড়ি’।
ওই তিন শিক্ষার্থী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বখাটের উৎপাত বেড়ে গেছে। বিশেষত স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার সময় ছাত্রীদেরকে নানাভাবে উত্যাক্ত করা হচ্ছে। মালিহা তাবাসসুম জানান, যদিও বখাটেদের রুখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন বেশ তৎপর। তবে খবর কিংবা অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই তাৎক্ষণিকভাবে বখাটেদর উৎপাত বন্ধে কি করা যায় সেটি নিয়েই তারা  তিনজন ভাবছিলেন। মূলত সেই ভাবনা থেকেই ইলেক্ট্রনিক্স সেন্সর এবং ব্লুটুথ ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের এই ঘড়িটি তারা তৈরি করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ৬৪১ টাকা।
মালিহা তাবাসসুম জানান, তাদের তৈরি ঘড়ি দুইভাবে বখাটেদের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, প্রথমত কেউ আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ঘড়িটি হুইসেলের মত আওয়াজ সৃষ্টি করবে। এর পাশাপাশি স্বজনদের কাছে নিজের অবস্থান জানান দিতে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহারেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।
রুকাইয়া বিনতে ইসলাম বলেন, ঘড়িটিতে হার্টবিটের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি সেসন্সর লাগানো হয়েছে। সাধারণত যখন কোন কেউ বিপদের আঁচ করতে পারে তখন তার হার্টবিট আর স্বাভাবিক থাকে না। হয় বাড়বে নয়তো কমবে। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে অর্থাৎ হার্টবিট কমলে বা বাড়লে ঘড়ি থেকে হুইসেলের শব্দ উৎপন্ন হবে। এতে তিনি নিজেকে রক্ষায় আশে-পাশের মানুষের সহায়তা পাবেন।
সাদিয়া ইয়াসমিন বলেন, ঘড়িটিতে মোবাইল ফোনের অ্যাপ ভিত্তিক একটি ব্লুটুথ সংযুক্ত করা হয়েছে। যখন কোন ছাত্রী বখাটেদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করবে তখন তিনি ঘড়িতে থাকা সেই ব্লুটুথের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে থাকা নির্ধারিত এক বা একাধিক মোবাইল ফোনে তার অবস্থান সংক্রান্ত একটি কোড নম্বর পাঠাবে। তখন সেই মোবাইলগুলো যাদের কাছে থাকবে তারা সেই কোড নম্বরটি গুগল ম্যাপে প্রবেশ করালে আক্রান্ত ছাত্রীটির অবস্থান জানা যাবে।
বিজ্ঞান উৎসবে স্থান পেয়েছে সপ্তম ও নবম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীর তৈরি করা বাক প্রতিবন্ধী সহায়ক একটি রোবর্ট। ওই রোবর্টের কাজের ধরণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে এস এম নাহিয়ান জানায়, মূলত বাক প্রশিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সহায়তার জন্যই রোবর্টটি তারা তৈরি করেছে। মাত্র পনের হাজার টাকায় তৈরি সহজে বহনযোগ্য রোবর্টটিকে স্পর্শের মাধ্যমে তার দু’টি হাতকে কাজে লাগিয়ে ল্যাপটটে কাজ করাসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ করা সম্ভব। নাহিয়ান জানায়, বাবা-মার দেওয়া টিফিনের টাকা এবং ঈদ সালামির টাকা জমিয়ে তারা রোবর্টটি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞান উৎসবে ৪টি গ্রুপে মোট ৮৬টি প্রজেক্ট প্রদর্শন করা হয়। এর আগে এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও  ৪ এপিবিএন বগুড়ার অধিনায়ক (পুলিশ সুপার পদমর্যাদা) নিজাম উদ্দিন সকাল ১০টায় প্রতিষ্ঠান চত্বরে বিজ্ঞান উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুপুর ১২টায় উপস্থিত বক্তৃতা, গেমিং প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞানীদের প্রতীকী সেমিনার এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ এটিএম মোস্তফা কামাল। অন্যানদের মাঝে ৪ এপিবিএন বগুড়ার সহ অধিনায়ক (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) আবু সাইম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন, এপিবিএন পাবলিক স্কুল ও কলেজের ইনচার্জ মাহবুবা হক, শিফট ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জুয়েল, সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক ও প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ রওশন আরা বেগম উপস্থিত ছিলেন। প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। পরে বিকেলে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।