ভিসির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনশন অব্যাহত

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৩৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯২ বার।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শনিবার বহিরাগতদের হামলার পর উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, অজানা আতঙ্ক আর হুমকির মুখে রোববারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছেন।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধূরী এমদাদুল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছন। 

আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তারা বলেন, 'আমাদের এমপি সাহেব শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও হাই কমান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে আসার পর এমপি সাহেব ও শেখ কবির সাহেবের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরব। তারা তোমাদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাবেন।'

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে একটি আল্টিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তারা।

আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন ও ইয়াসিন মোল্লা বক্তব্য দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এ সময় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম. বদরুল আলম বদর, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মিটু, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন।

আন্দোলন থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টার হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। রোববার থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এরই মধ্যে শনিবার দুপুরে ভিসি সমর্থক বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সহ ২০ শিক্ষার্থী আহত হন।

এরপরও সাধারণ শিক্ষার্থীরা চতুর্থ দিনের মতো ভিসির পতন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা ভিসিবিরোধী শ্লোগান দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ভিসি সমর্থিত শিক্ষকরা তাদের ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সম্রাট বিশ্বাস বলেন, ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান চৌধূরী টুটুল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক।'

শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাহতদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার ইউনিয়নের কেউ জড়িত নেই। ফের বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে আমি আমার ইউনিয়নবাসীকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করব। শিক্ষার্থীদের রক্ষা করব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামস্ আরা খান বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের ওপর বহিরাগরা যাতে হামলা করতে না পরে সে বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসি পতনের আন্দোলন শুরু করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন থেকে সরে যেতে হুমকি দিচ্ছেন না। এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। 

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এমপি মহোদয়, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ , যুবলীগ, ছাত্রলীগকে জানিয়েছি। এছাড়া এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।