নওগাঁর রাণীনগরে একযুগ ধরে খেজুর গাছে পায়ে শিকলবন্দি আসলাম!

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০৯ বার।

নওগাঁর রাণীনগরে প্রায় একযুগ ধরে খেজুর গাছের সাথে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন আসলাম সাকিদার (৩৮) কে। যে বয়সে স্বাভাবিক ভাবে কাজকর্ম করে জীবন জীবিকা নির্বাহের কথা অথচ অর্থভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা না হওয়ায় ঠিক সে বয়সে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আসলাম রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউ’পির হরিশপুর গ্রামের মুনি সাকিদারের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আসলাম ছাত্র জীনে ৭ম শ্রেণীতে পড়া লেখা চলা অবস্থায় হঠাৎ করেই চলাফেরার গতিবিধিসহ নানা ধরণের মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। একারণে তার পরিবার চিকিৎসার জন্য এলাকার বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের দ্বারস্থ হয়। এতে শুধুমাত্র টাকার ক্ষয় হলেও কোন কাজ না হওয়ায় দিন দিন নানা ধরনের অত্যাচার বেরে যায়। অনেক সময় লোকজনকে মারপিট করতে থাকে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে আসলামের হাত-পায়ে শিকল বন্দী করে বাড়ীতে রাখে পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদরস্থ কথিত মানসিক ডাক্তারের দ্বারস্থ্য হলে সেখানে কবিরাজের বাড়িতে রেখে প্রায় তিন বছর চিকিৎসা অন্তে আসলাম কিছুটা সুস্থ হয়। এর পর তাকে পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে আসে। সে অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা কাজ কর্ম করতে শুরু করলে বছর খানেক পরে আসলামকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর দাম্পত্ত জীবন হাসি খুশিতে চলা অবস্থায় তাদের ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এর কিছুদিন পরই ঠিক আগের মতো মানসিক পরিবর্তন ঘটলে ধীরে ধীরে সে পুরো পুরি উন্মাদ হয়ে যায়। দরিদ্র বাবা আর্থিক অনটোনের কারণে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারেনি। ফলে উন্মাদনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় তাকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়। পরিবারে পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে আসলাম ছোট। আসলামকে রাতে বাড়ীর বারান্দায় এবং সকাল হলে বাড়ীর পার্শ্বে খেুজর গাছের সাথে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানেই সারাদিনের খাবার দেয়া হয়। এভাবেই চলছে প্রায় একযুগ। পরিচিত জনেরা তাকে দেখতে গেলে অনেক সময় সুন্দর করে কথা বলে আসলাম। ‘ভাই হামাক একটা বিড়ি দে? হামার জন্যে বিড়ি আনিচু। তাড়াতাড়ি দে বিড়ি খামু!’

স্থানীয়রা বলছেন, অর্থভাবে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে না পারায় বন্দি জীবন যাপন করতে হচ্ছে আসলামকে।

আসলামের বৃদ্ধ বাবা মুনি সাকিদার (৭৫) ও বড় ভাই মেছের আলী বলেন, 'তাকে সুস্থ্য করতে পারিবারিক ভাবে আমরা সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করেছি, কিন্তু তাকে ভালো করতে পারিনি। তাকে উন্নত চিকিৎসা করালে ভাল হয়ে যাবে কিন্তু সে সার্মথ না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছিনা। তার পাগলামিতে বিরক্ত ইতোমধ্যে তার স্ত্রী ছেলেকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে গেছে। নিরুপাই হয়ে চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত আসলামের করুন জীবন যাপন ও বন্দিদশা দেখতে হচ্ছে।'

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খান বলেন, 'দেশে এই ধরণের রোগীদের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে পাবনা মানসিক হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে তার সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, 'সমম্প্রতি ভবানীপুর থেকে একজনকে উদ্ধার করে আমরা চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আসলামের বিষয়টি আমাদের জানা ছিলনা । এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে সু-চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।'