৪ ক্লাবে ক্যাসিনোর কথা জানত না পুলিশ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫০ বার।

ঢাকার মতিঝিল থানার প্রায় সীমানালাগোয়া চারটি স্পোর্টিং ক্লাব। রোববার দিনভর এসব ক্লাবে 'জুয়াবিরোধী' অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অথচ চার দিন আগেই র‌্যাব ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি ক্লাব বন্ধ করে দেয়। খবর সমকাল অনলাইন 

থানার পাশে ক্লাবগুলোতে কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো চললেও এতদিন পরে কেন অভিযান- সেই প্রশ্নের মুখে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এতদিন তারা জানতেন না সেখানে জুয়া খেলা হয়! গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ অভিযান শুরু হয়েছে।

পুলিশ এমন তথ্য দিলেও ক্লাবগুলোর আশপাশের লোকজন বলছিলেন, দিন-রাত চলে আসছিল জুয়া। অদূরেই থানা থাকলেও ক্লাবগুলোর সামনেও নিয়মিতই দেখা যেত পুলিশের গাড়ি। ভেতরে জুয়া হতো, পুলিশের তা না জানার কথা শুনে ঘটনাস্থলেই কারও কারও হয়তো মনে হয়েছিল রবিঠাকুরের সেই কবিতাটি- 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া/...একটি শিশিরবিন্দু।' 

রোববার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এবং দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় পুলিশ। এসব ক্লাব থেকে ক্যাসিনো মেশিন, জুয়ার বোর্ড, বিদেশি মদ, সিসা বারের সরঞ্জাম, নগদ টাকা ছাড়াও জুয়ার নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে তারা। তবে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের লোকজন ক্লাবগুলোর ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যুবলীগের ওই নেতার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায় তা।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, যখনই তাদের কাছে তথ্য এসেছে, তখনই তারা অভিযান চালিয়েছেন। এর আগেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, 'ক্লাবগুলোর অবৈধ খেলা বা জুয়ার অংশে অভিযান চালাচ্ছি আমরা। তবে মূল খেলা অর্থাৎ ফুটবল বা ক্রিকেটে যাতে এর প্রভাব না পড়ে সে বিষয়টিও মাথায় রাখছি। স্পোর্টিং ক্লাবগুলোতে কারা ক্যাসিনো বসিয়েছিল, তাও তদন্ত করা হচ্ছে।'

অভিযানের সময়ে ক্লাবগুলো ঘুরে দেখা যায়, খেলোয়াড়দের থাকার অংশটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কক্ষগুলোর কোথায়ও ফ্যান ঘুরলেও লাইট জ্বলে না। কিন্তু যে অংশে ক্যাসিনো চলত সেখানে বিলাসিতায় পরিপূর্ণ। রঙিন আলো-আঁধারি রুম, দামি চেয়ার, আসবাবপত্রে ভরা কক্ষগুলোতে ক্যাসিনোর সঙ্গে চলত মদের আসর। দেয়ালজুড়ে সাজানো বিদেশি নারী মডেলদের বড় বড় অশ্নীল ছবি। নতুন যে কেউ এসব ক্লাবের ক্যাসিনোতে ঢুকলে মনে হবে এ যেন ঢাকার মতিঝিল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাস!

ক্লাবগুলোর আশপাশের দোকানি ও স্থানীয় লোকজন বলছিলেন, গত বুধবার একই এলাকায় ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর আশপাশের ক্লাবগুলোও তালাবদ্ধ হয়ে যায়। গা-ঢাকা দেন ক্যাসিনো চালকরা। এর আগে ওই এলাকায় জুয়াড়িদের দামি গাড়ির ভিড় লেগে থাকলেও গত কয়েকদিনে পুরোটাই ফাঁকা ছিল।

বন্ধ হওয়া ক্লাবে এই অভিযান কেন জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোনালিসা বেগম দাবি করেন, এতদিন তারা জানতেন না এসব ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর বসে। তাদের কাছে তথ্য আসার পরই অবৈধ এসব ক্যাসিনো ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন।

থানার পাশে থাকা ক্লাবগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জুয়া চললেও পুলিশ এতদিন পরে জানল কেন- এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা উত্তর না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কথা বলার পরামর্শ দেন।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলী নোমান জানালেন, এগুলো ফুটবল-ক্রিকেটের ক্লাব। এর ভেতরে যে ক্যাসিনো আছে, এ বিষয়ে পুলিশের কোনো ধারণাই ছিল না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই তারা অভিযান চালিয়েছেন।

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযানের সময় ভেতরে অন্তত ১৬টি ক্যাসিনো মেশিন, মেশিনে ব্যবহৃত কয়েন, দুটো রুলেট টেবিল, ৯টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, টাকা তোলার পস মেশিন, টাকা গণনা করার একাধিক মেশিন, বিভিন্ন হিসাবের খাতা দেখা যায়। এ ছাড়া একটি টেবিলে ১০টি বড় সাইজের ছুরি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে এমন ১১টি ওয়্যারলেস সেটও পাওয়া যায়।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ৯টি বোর্ড, নগদ এক লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, জুয়ায় ব্যবহৃত চিপস, সিসা বারের সরঞ্জাম ও মদ উদ্ধার করে পুলিশ।

আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবেও বাকারা ও রুলেট টেবিল ছাড়াও ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাবগুলোর সবগুলোতেই দেখা যায়, ভিআইপি জুয়াড়িদের জন্য আলাদা খেলার বোর্ড ও কক্ষ রয়েছে। তাদের জন্য রন্ধনশালাও রয়েছে।

পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস জানান, তারা ক্লাবগুলোতে থাকা অবৈধ সবকিছুই জব্দ করে তা তালাবদ্ধ করে দিয়েছেন।