ইলিশের জন্য পশ্চিমবঙ্গে হাহাকার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:২৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৪ বার।

ইলিশ নিয়ে রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়েছে ওপার বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে এখন ইলিশ যাচ্ছে কম। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধে বাধাপ্রাপ্ত হওয়াসহ কয়েকটি কারণে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ ধরা ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে বেড়েছে দামও।

২০০২-০৩ অর্থবছরে হুগলি নদীতে ধরা পড়ে ৬২ হাজার ৬০০ টন ইলিশ। দেড় দশক পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটা নেমে এসেছে ২৭ হাজার ৫৩৯ টনে। কমেছে ৫৬ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা ১৬০ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৯৯ হাজার  ৩২ টন থেকে ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান উৎপল ভৌমিক জানান, ইলিশ সাধারণত তিনটি পথ ধরে- হুগলি মোহনা, বাংলাদেশের মেঘনা নদী এবং মিয়ানমারের ইরাবতী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হুগলিতে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা এবং পলি জমার কারণে ইলিশ আর এই পথে এগোচ্ছে না। বরং বেছে নিচ্ছে মেঘনা নদীপথ। এখন ৭৫ শতাংশ ইলিশ ধরা পড়ে বাংলাদেশে, ১৫ শতাংশ মিয়ানমারে আর মাত্র ৫ শতাংশ ভারতে।

উৎপল ভৌমিক জানান, কোনো নদীর গভীরতা ৩০-৪০ ফুট না হলে ইলিশের ঝাঁক সেখানে প্রবেশ করে না। তবে ফারাক্কা বাঁধ ও উপযুক্ত খননের অভাবে হুগলির মোহনা দ্রুত গভীরতা হারাচ্ছে। আছে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার মতো সমস্যা। এখানে কয়েক বছর আগে মাছ ধরার ৩ হাজার নৌকা থাকলেও এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

ক্ষুদ্র জেলেদের একটি সংগঠনের নেতা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রতিটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা শত শত জাল মোহনায় ফেলা হয়। তাহলে মাছ নদীতে আসবে কীভাবে। কাজেই অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ইলিশ মেঘনায় চলে যাচ্ছে। এ নদীর গভীরতা ৫০-৬০ ফুট।

উৎপল ভৌমিক বলেন, ইলিশেরও জিপিএসের মতো নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। অটোলিথ নামের এ ব্যবস্থায় তারা সহজেই নিরাপদ গন্তব্য বেছে নিতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্কের ইলিশ গবেষক দেওয়ান আহসান বলেন, মাছ ধরার জাল ও বালু ভরাটের কারণে ইলিশের সনাতনি গতিপথ বদলে যাচ্ছে।

ইলিশ গবেষক ইশা দাস বলেন, ফারাক্কা বাঁধ, পলিজমা, মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য শিকারসহ নানা কারণে ইলিশের স্বাভাবিক গতিপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে ইলিশের ঝাঁক এলাহাবাদ পর্যন্ত আসত। ফারাক্কা বাঁধের কারণে তারা এখন আর আসতে পারে না।

গবেষক দেওয়ান আহসান বলেন, মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য শিকার, পলি সমস্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত একযোগে কাজ না করলে দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।