রাজনৈতিক দলের কাজে নিষেধাজ্ঞার এখতিয়ার আদালতের নেই: রিজভী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৩ বার।

কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখতিয়ার আদালতের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুর কবির রিজভী। তিনি বলেন, ছাত্রদল এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছে, তার সবই আইনসম্মত। ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্ধারণ করেছে। এটা রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নব্য বাকশালীদের ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠনের মতো অবৈধ কিছু নয়। খবর সমকাল অনলাইন 

মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নতুন কমিটির কার্যক্রমে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে এ কথা বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, আইনের বিধানে রাজনৈতিক দল বা তাদের কর্মকাণ্ড আদালতের এখতিয়ারে পড়ে না। আরপিও ১৯৭২ এবং দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অডিন্যান্স-১৯৭৮ অনুসারে বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। এই দল বা তার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মকাণ্ডের ওপর সহকারী জজ আদালত বা নিম্ন আদালতের কোনো আদেশ জারি বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এখতিয়ার নাই। আমরা অতীতে কখনও দেখিনি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে আদালত হস্তক্ষেপ করছে। এখন ছাত্রদলকে ধ্বংস করার জন্য আদালতকে নগ্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে এতোই ভয় পায় যে ছাত্রদলের কমিটি নিয়েও তাদের গায়ে জ্বালা ধরে গেছে। আদালতকে দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের এই সংস্কৃতি দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনও কোনো কাগজ এসে পৌঁছায়নি। তাই এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারব না। 

রিজভী আরও বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেওয়া, নতুন দু'জনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী ও অবৈধ। অথচ এ ব্যাপারে আদালত নিশ্চুপ। আদালত একেবারে ডার্ক গ্লাস পড়ে বসে আছেন। আদালত যদি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হত তাহলে আরপিও ভঙ্গ ও দস্যূবৃত্তিক কর্মকাণ্ড আমলে নিয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করে দিত। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে শোকজ করত।

তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফোর্বসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ। তাদের বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ৯১০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৭৬৭৫ কোটি টাকা। এই সামিট গ্রুপের মালিক কে- এটা আপনারা নিশ্চয় জানেন। এরা সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ।

রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগের যে দুয়েকজন চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডের নেতা ধরা হচ্ছে, তাদের যদি দুইশ কোটি টাকার এফডিআর থাকতে পারে তাহলে এই সব (সামিট গ্রুপ) ব্যক্তিবর্গের টাকার পরিমানটা কতো? এরা সরকারি স্থাপনাতে কাজ করে কী পরিমান টাকা নিয়ে গেছে ও সেই টাকা দেশের বাইরে বিনিয়োগ করেছে- একবার ভাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবউন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, খন্দকার আবু আশফাক, খন্দকার হেলাল উদ্দিন, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহর  করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছিলেন। একই সঙ্গে ছাত্রদলের কাউন্সিলে কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ৫৩৩ জন কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কাউন্সিল নিয়ে বিগত দিনের দলের কার্যক্রমকে বৈধ ঘোষণা করেন কাউন্সিলররা। এর পরদিনই তারেক রহমান ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত দেন। ফলে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় রাতভর ভোটগ্রহণ ও পরদিন সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে ফজলুর রহমান খোকন ছাত্রদলের সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি করা হয়। ৭৩৬ সদস্যের এই ঢাউস কমিটি গত ৩ জুন ভেঙে দিয়ে সংগঠনটির নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।