অভিযুক্ত পৌরসভার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মেয়রের

বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিদিন ৩ লাখ পিস টাকার বাতিল নোট কেটে ফেলা হয়

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৩৩ বার।

বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় প্রতিদিন বাতিল হওয়া ৩ লাখ পিস নোট শ্রেডেড বা কেটে টুকরা করা হয়। ৫০ থেকে এক হাজার টাকার টুকরা নোটগুলো ইতিপূর্বে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবারই প্রথম সেগুলো পৌরসভার সহায়তায় অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীরা বাতিল টাকার টুকরোগুলো নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনের পরিবর্তে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়ায় হুলস্থুল পড়ে যায়। বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন, বর্জ্য ফেলানোর নির্ধারিত ডাাম্পিং স্টেশন ছেড়ে টাকার টুকরাগুলো যারা অন্যত্র ফেলেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার বাতিল করা বিপুল পরিমাণ টাকার নোটের টুকরা গত রোববার জেলার শাজাহানপুর উপজেলার খারুয়া বিলে ফেলা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়ার পর তা নিয়ে রীতিমত হুলস্থুল কা- ঘটে যায়। স্থানীয় জনগণের সন্দেহ এক বা একাধিক ব্যক্তি অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা মেশিনে কেটে পানিতে ফেলে গেছে। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ক্যাসিনো ও জুয়ার আস্তানাগুলোতে অভিযান শুরু করার পর তাদের ওই সন্দেহ আরও বদ্ধমুল হয়। যে কারণে মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় শত শত মানুষের ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান। 
পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে টুকরা করা ওই টাকার নোটগুলো বাতিল ও অপ্রচলনযোগ্য। বর্জ্য হিসেবে সেগুলো নির্ধারিত স্থানে ফেলার জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে বগুড়া পৌরসভাকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা রোববার সেগুলো সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থানে না ফেলে ওই বিলের ধারে ফেলে যায়। তবে মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ জাতীয় দৈনিকগুলোর অনলাইন সংস্করণ এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর জনমনে বিপুল পরিমাণ টাকার টুকরা নিয়ে সৃষ্ট সন্দেহও দূর হয়। কেন এমন হলো?
ওই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক, পৌরসভা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার জড় সমাগ্রী বিভাগের যুগ্ম ব্যবস্থাপক মোঃ শাহজাহান জানান, ওই শাখায় প্রতিদিন বাতিল ও অপ্রলনযোগ্য তিন লাখ পিস নোট (৫০ থেকে এক হাজার টাকা) শ্রেডেড বা ছিন্নভিন্ন করা হয়। ইতিপূর্বে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বরে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হত। সর্বশেষ গেল বছরও বাতিল নোটগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। কিন্তু তাতে পরিবেশ দূষিত হয় বলে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এজন্য সেগুলো বর্জ্য হিসেবে পৌরসভার মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বরে একটি ডাস্টবিন স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চলতি বছরের ২০ আগস্ট বগুড়া পৌরসভার মেয়রকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তবে বগুড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা চত্বরে এখন পর্যন্ত কোন ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। ফলে টাকার টুকরা ভর্তি অর্ধশত বস্তা শাখা চত্বরেই পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সেখান থেকে কয়েকটি কয়েকটি বস্তা পৌরসভার কর্মীরা বর্জ্য অপসারণের ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়।
বগুড়া পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ জানান, এই শহরে বর্জ্য অপসারণের পদ্ধতিটি একটু আলাদা। বগুড়া পৌরসভায় কোথাও ডাস্টবিন রাখা হয়নি। তার পরিবর্তে পৌরসভার মহল্লাভিত্তিক সমিতির (সিবিও) নিয়োজিত কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা নির্ধারিত স্থানে (ডাম্পিং স্টেশন) ফেলে দেয়। তিনি জানান, শহরের বাসা-বাড়িসহ সম্ভাব্য সব এলাকা থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্যগুলো ফেলার নির্ধারিত স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাঘোপাড়া এলাকায়। বর্জ্য ফেলানোর নির্ধারিত স্থান বাঘোপাড়ার পরিবর্তে কেন অন্যত্র ফেলানো হলো-এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বর্জ্যবাহী ট্রাকের চালকের ভুলের কারণে এটি হয়েছে। মাসুম নামে ওই চালককে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা টাকার টুকরাভর্তি বস্তাগুলো নির্ধারিত স্থানে ফেলতে। কিন্তু তিনি সেগুলো তার বাড়ির কাছে শাজাহানপুর উপজেলার খারুয়া বিলের ধারে সেগুলো ফেলেছে। অবশ্য ব্যাংক চত্বরে আরও যে বিপুল সংখ্যক বস্তা রয়েছে সেগুলো যথারীতি বাঘোপাড়ায় ডাম্পিং স্টেশনেই ফেলা হবে।’
বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান জানান, নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে যারা অন্যত্র বর্জ্য (টাকার টুকরা) ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট শাখার সকল কর্মচারী এবং অভিযুক্ত ট্রাক চালককে কালই (বুধবার) শোকজ করা হবে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ‘পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলের কারণে জনমনে অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল। আশাকরি ভবিষ্যতে তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।’