রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে বিশ্বকেই: প্রধানমন্ত্রী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৪৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০ বার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য সমস্যা। এ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। দেশটির অসহযোগিতার কারণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন বাংলাদেশের উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সুতরাং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানও করতে হবে সেখানেই। খবর সমকাল অনলাইন 

যুক্তরাস্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার জাতিসংঘে মার্কিন থিংক ট্যাংক ‘কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনস’ আয়োজিত ‘এ কনভারসেশন উইথ প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ  তৈরি করতে মিয়ানমানরকে বাধ্য করার ব্যবস্থা নিতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে। এজন্য তিনি সকলকে এগিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন। 

 এ সময় সন্ত্রাস, চরমপন্থা ও সংঘাত বন্ধে চার দফা পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রস্তাব করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পিত নৃশংসতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকার তাদের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের নিধন করছে। সহিংসতা ও নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এসেছে। বিষয়টি মানবিক হওয়ায় বিবেচনা করেই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। বাংলাদেশ দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা বিবরণ দিয়ে বলেন, এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় দিয়েছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ নিজের নির্বাসিত জীবনের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এসব মানবিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাধ্যমত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সহায়তা করছে।

তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সঙ্কটের গভীরতা স্বচক্ষে দেখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে আসার আহ্বান জানান। ১৯৮২ সালে মিয়ানমার সংবিধান পরিবর্তন করে রোহিঙ্গাদের কীভাবে নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, সে বিষয়টি উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সংলাপে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ঘুরে আসুন। দুর্দশা ও ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র সম্পর্ক তাদের মুখ থেকে শুনুন। নিষ্ঠুরতম বিবরণ শুনলে আপনাদের হৃদয় নাড়া দেবে। বুক কাঁপবে ও আঁতকে উঠবেন। দ্রুতযেন রোহিঙ্গাদের কষ্টের সমাপ্তি হয় তেমনটি চাইবেন আপনারা।’

সংলাপে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় নেওয়া উদ্যোগগুলোর তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম ও সীমানা নেই। সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থের যোগান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দূর করতে হবে সামাজিক বৈষম্য। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সরকারের সফলতা এসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রোহিঙ্গা সঙ্কট, জলবায়ুসহ অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সংলাপ হয়েছে ও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ও এ বিষয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে- রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা স্বদেশে ফিরে যেতে চাইছে না। এজন্য তারা যাতে ফিরে গিয়ে নিজ ভূমিতে বসবাস করতে পারে সেজন্য মিয়ানমারের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা উচিত। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরার তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছে। নিজস্ব অর্থে ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। ওই তহবিল থেকে কয়েকশ প্রকল্পে ইতিমধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও বাংলদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পিপিআইয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩০তম অর্থনীতি। এ বছর বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিনও খুব বশি দুরে নয়। স্পেকটেটরের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত দশ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মুুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মক্কায় ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলাম। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যদিকোনো সমস্যা হয়, সেটা সংলাপ বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তবে কোনোভাবে সেটি হচ্ছে না। সমস্যা কোথায় সেটিও অনেকেই জানেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ বন ও জলবাযু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এম জিয়া উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ ও সিআরএফ’র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এন হ্যাস প্রমুখ। 

একইদিন প্রধানমন্ত্রী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সাক্ষাৎকার দেন। পরে বাংলাদেশ হাউজ আয়োজিত  নৈশভোজে অংশ নেন।