চাকুরি দেবার নামে অর্থ-আত্মসাত মামলায়

ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান গ্রেফতার

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ,ধুনট (বগুড়া)
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৪৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩০৪ বার।

বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদকে (৩৮) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় পৌর এলাকার চরধুনট গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শতাধিক ব্যক্তিকে চাকুরি দেয়ার নামে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গ্রেফতারকৃত সুলতান মাহমুদ ধুনট পৌর এলাকার সদরপাড়ার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, সুলতান মাহমুদ ২০১৫ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দু’বছর পর সভাপতি’র পদ লাভ করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকেই দখলবাজি, তদবির, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন পুলিশ কনস্টেবল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্বাস্থ্য বিভাগ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে। সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আইনজীবী, শিক্ষকসহ অসংখ্য পেশার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় সুলতান মাহমুদ রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখায় তার সঞ্চয়ী হিসাবের (নং-১৩৬) চেক দিয়েছেন। চাকরি দিতে না পারলে এক মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তার ওই ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন চাকরি প্রার্থীরা।

তার প্রতারণার শিকার বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি কোয়েল ইসলাম জানান, সুলতান মাহমুদ নিজেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নাতনী জামাই পরিচয় দেন। তিনি তার (কোয়েল) মেয়ে জামাইকে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার নামে তিন বছর আগে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন। বিশ্বাস স্থাপনে ব্যাংক চেক দিয়েছিলেন। চাকরি দিতে না পারলেও টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করেছেন। ফোন বন্ধ থাকায় তাকে বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে তিনি (সুলতান) ধুনট উপজেলার পারনাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিন মুকুলের ছেলে নাসিম উদ্দিনকে রূপালী ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ও ২০১৯ সালের ২৫ মে দুই দফা ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেন। তাকেও ব্যাংকের চেক দেয়া হয়েছিল। চাকরি ও টাকা না পেয়ে নাসিম উদ্দিন আদালতে মামলা করেন। বগুড়ার অ্যাডভোকেট জাবেদ কাউসারের কাছে একই কায়দায় ছয় লাখ, মোস্তাফিজার রহমানের কাছে ১০ লাখ, আবদুস সাত্তারের কাছে ৩ লাখসহ শতাধিক মানুষের কাছে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুলতান মাহমুদ।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, চাকরি দেয়ার নামে পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছেন। চাকুরির তদবির করছেন। কাজ না হলে টাকাও ফেরৎ দিবেন। কিন্তু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে চাকুরি প্রার্থিদের দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখা ব্যবস্থাপক শাহানুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদের স্বাক্ষরিত অর্ধ কোটি টাকার প্রায় ১৫টি চেক ডিজঅনার হয়েছে। আরও অনেক ব্যক্তি চেক নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তার হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় কেউ টাকা তুলতে পারেননি। চেক জালিয়াতির ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, সুলতান মাহমুদ মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভেঙে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার শিকার তিন ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে সুলতান আত্মগোপনে ছিল। তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরোয়ানামুলে বুধবার সোয়া তিনটায় ধুনট পৌর এলাকার চরধুনট গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।