ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ হয়ে আ’লীগে সেই টেন্ডার মানিক

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৬ বার।

মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক। ছাত্রদলের নেতা ছিলেন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইন্সটিটিউট শাখার। বিএনপিকর্মী বাবা মনোয়ার ছিলেন ভ্যানচালক। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে দলবদল করে ফেলেন মানিকও। বর্তমানে তিনি মতিহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।

মানিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভেয়ার পদে চাকরি করেন। তবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করেন বেনামে। এখন সেই মানিকই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়িও। রাজশাহীতে তিনি টেন্ডার মানিক নামেই পরিচিত। কিছুদিন পরপরই দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। থাকেন পাঁচ তারকা হোটেল রিসোর্টে।

মতিহার থানা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানিয়েছেন, রাবিতে চাকরি করলেও মানিক দিনের বেশি সময় কাটান কর্মস্থলের বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি আইন লঙ্ঘন করে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর মেহেরচণ্ডি এলাকার বিএনপি কর্মী মনোয়ার হোসেনের ছেলে মানিক রাজশাহী সার্ভে কলেজের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানিক তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে ছাত্রলীগে ভিড়ে যান। এরপর তিনি বাগিয়ে নেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে পেছনে ফেলে রাতারাতি টেন্ডার মানিক হয়ে যান মতিহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।

রুয়েটের প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে টেন্ডার মানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেই রুয়েটের প্রায় ৭২ লাখ টাকার ছয়টি কাজ করছেন। টেন্ডার ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এ কাজগুলো হাতিয়েছেন টেন্ডার মানিক। এভাবেই বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি কাজ বাগিয়ে নিয়ে কোটিপতি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার দলেরই এক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের এক ঠিকাদার জানান, টেন্ডার মানিকের পার্টনার রয়েছেন রুয়েটের দুই কর্মকর্তা। এরা হলেন- রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ও অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো. রনি এবং রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী, রুয়েট অফিসার্স সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হারুন-অর-রশিদ।

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে রুয়েটের বর্তমান প্রশাসনকে অনেকটা জিম্মি করেই রুয়েটের এই দুই কর্মকর্তা টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে টেন্ডার মানিকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার কাজ করছেন বলেও অভিযোগ।

এ দিকে সম্প্রতি রুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উপকরণের জন্য ৩৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। একনেক সভায় ‘রুয়েট অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই উন্নয়ন প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়।

রুয়েটের এই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে তৎপরতায় রয়েছেন টেন্ডার মানিকের নেতৃত্বে এই প্রভাবশালী টেন্ডার সিন্ডিকেট।

অভিযোগের বিষয়ে মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, আমার নামে কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। আমি কোনো ঠিকাদারি কাজের সঙ্গেও জড়িত নই। তবে চাকরির আগে বিএমডিএতে ঠিকাদার জাকারিয়া নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতাম।