মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনিয়ম

সাইনবোর্ডের দাম ৫৫ হাজার, নোটিশ বোর্ড ২৪ হাজার টাকা!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩০ বার।

মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, আত্তীকরণ, অসদাচরণ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ সব বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে শিক্ষাব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান ফরিদপুরে একটি প্রাইভেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট খুলেছেন। সেখানে তার স্ত্রী মাকসুদা আক্তারকে বানিয়েছেন অধ্যক্ষ।

সেই মাকসুদা আক্তারকে মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গার্মেন্টস ট্রেডের প্রশিক্ষক বানিয়েছেন নিজের ক্ষমতা বলে। অধ্যক্ষের স্ত্রী মাকসুদা আক্তার উদ্ভিদ বিদ্যার ছাত্রী হলেও তাকে অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে গার্মেন্টস ট্রেডে।

এই মাকসুদা আক্তার কোনো ধরনের ক্লাস না নিয়েই বেতন তুলে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সেইপ প্রজেক্টে ৪টি ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এই শিক্ষক নিয়োগেও তিনি ব্যাপক দুর্নীতি করেন।

অভিযোগ রয়েছে, এই শিক্ষক নিয়োগে তিনি কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণে খাতা-কলম দেয়ার কথা থাকলে পূর্ববর্তী ব্যাচের অধিকাংশ প্রশিক্ষাণার্থী বিনামূল্যে খাতা-কলম পায়নি। বিদেশগামী কর্মীদের ভর্তিফি ২০০ টাকা হলেও প্রশিক্ষাণার্থী কাছ থেকে আদায় করা হয় ২৩০-২৫০ টাকা।

এ ছাড়াও বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য অতিথি শিক্ষক আনার কথা থাকলেও তিনি অতিথি শিক্ষক আনেন না। অতিথি শিক্ষকের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থ নিজেই ভোগ করে থাকেন বলে অভিযোগ। এই খাত থেকে তিনি কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাউজ কিপিং ট্রেডে অধিকাংশ সময়ই ক্লাস নেয়া হয় না বলে দাবি পূর্ববর্তী প্রশিক্ষার্থীদের।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ৩টি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। এই বরাদ্দকৃত গাড়ি পারিবারিক কাজে ব্যবহারের বিধান না থাকলেও এ সব গাড়ি তার ছেলেকে স্কুলে আনা নেয়ার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। শুধু তাই নয় ড্রাইভিং প্রশিক্ষককে তিনি ব্যক্তিগত ড্রাইভারের মতো কাজে ব্যবহার করে থাকেন।

এ ছাড়াও সেইপ প্রকল্পের কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন বলেও প্রশিক্ষদের অভিযোগ। সব শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড করা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলেও কোনো শিক্ষার্থীকেই আইডি কার্ড দেয়া হয় না। শিক্ষার্থী প্রতি আইডি কার্ডের জন্য বরাদ্দ ৩০ টাকা।

এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জামানত বাবদ ১০০ টাকা রাখা হয় যেটা ফেরতযোগ্য। ফেরত দেয়ার কথা বলে সই-স্বাক্ষর রাখা হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীকেই সেই টাকা ফেরত দেয়া হয় না।

উন্নয়ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ৭০ টাকা করে রাখা হয়। সেই টাকা ব্যাংক হিসাবে থাকার কথা। এ পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ। এ সব খাত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি লোপাট করেছেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

অভিযোগ রয়েছে উন্নয়ন খাতের কয়েক লাখ টাকা তিনি ভুয়া বিল-ভাউচার করে খরচ দেখিয়েছেন। এ রকম বেশকিছু বিল-ভাউচার এই প্রতিবেদকের হাতে রক্ষিত আছে।

সেখানে দেখা গেছে মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য একটি সাইন বোর্ড বানানোর খরচ দেখানো হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া একটি নোটিশ বোর্ড বানানোর খরচ দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অফিসের একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।

অতিরিক্ত বিল-ভাউচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির মাধ্যমে সবকিছু করা হয়। বিল যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে ক্রয় কমিটি আমার কাছে অভিযোগ দিবে তারা তো সেটা দেয়নি। ক্রয় কমিটি বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করে, এরপর হিসাবরক্ষক স্বাক্ষর করে, তার পরে আমার কাছে আসে। ভুল যদি করে থাকে ক্রয় কমিটি করেছে।

একটি সাইন বোর্ডের দাম ৫৫ হাজার টাকা এটা বেশি কিনা- এমন প্রশ্ন করা হলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটা মার্কার সাইনবোর্ডের এই পরিমাণ লাগবে। ওটা লাইটিং সাইনবোর্ড নরমাল কোনো সাইনবোর্ড নয়।

ড্রাইভিং ট্রেইনারকে দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে ড্রাইভিং ট্রেইনার তার কাজই গাড়ি চালানো। যেহেতু প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভার নেই। তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। ফলে টিচার হিসেবে আমাকে নিয়ে গেছে।