বগুড়ায় আগাম বন্যায় ২০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

অরুপ রতন শীল
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২২ ২১:০৪ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ৩৪ বার।

বৃষ্টিপাত ও উজানী ঢল কমেছে। বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। জেগে উঠছে নদী তীরবর্তী বিধ্বস্ত ফসলি জমি। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে আবাদের ক্ষয়ক্ষতি। চলতি বছরে আগাম বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও কৃষকের। আউশ, সবজি, পাট, ভূট্টা, আখ এবং বীজতলার ক্ষতি হয়েছে বেশি। এতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা ও শেরপুর এই চার উপজেলায় কৃষকদের প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। 

 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর আগাম বন্যায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থেকে আউশ, পাট, সবজি, ভুট্টা এবং বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কাজলা, হাটশেরপুর, সারিয়াকান্দি, কর্ণিবাড়ি, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কামালপুর, বোহাইল এবং পৌরসভার আংশিক এলাকার কৃষকদের ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  এর মধ্যে আউশে  তিন কোটি ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, সবজিতে  ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, পাটে আট কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ভুট্টায়   ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

 

সোনাতলা উপজেলার তেকানিচুকাইনগর, পাকুল্ল্যা, জোরগাছা ও মধুপুর ইউনিয়নে কৃষকদের ৬ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট চাষীদের। 

 

ধুনট উপজেলার শিমুলবাড়ি, সহড়াবাড়ি, বানিয়াজান, ভাণ্ডারবাড়ি এবং গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া এলাকার কৃষকদের ৯৫ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। 

 

এছাড়া আগাম বন্যায় শেরপুর উপজেলার খানপুর, সুঘাট ও গাড়িদহ ইউনিয়নের কৃষকদের আউশ, ভুট্টা ও সবজি ফসল পানিতে ডুবে যায়। এতে মোট ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ভূট্টাচাষীরা।

 

সারিয়াকান্দির কৃষক রুহুল আমিন জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। এখন প্রায় পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু কাটার আগেই বন্যার পানিতে সব শেষ। ক্ষেতে মরা পাট পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।

 

সোনাতলার কৃষক শাহাদাৎ হোসেন জানান, তাঁর দুই একর জমি আবাদের জন্য তৈরি করা বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। কিন্তু বীজ পাওয়া যাচ্ছে না।

 

ধুনট এলাকার কৃষক আজমল হোসেন জানান, এবছর তিনি দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলেন। বেশির ভাগ পাট ভেসে গেছে।  জমিতে লাগানো আউশ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।  

 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক বলেন, আগাম বন্যায় জেলায় চার উপজেলায় প্রায় ২০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গত ২৭ জুন সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বন্যায় সবেচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট এবং আউশ ধানে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। সরকার থেকে প্রণোদনা আসলে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

 

এদিকে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। 

 

জেলা প্রশাসক মো: জিয়াউল হক বলেন, 'আগাম বন্যায় জেলায় কৃষকদের ক্ষতি পূরণে সরকার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।'