ঢাবিতে ভর্তি হলেন বগুড়ার সেই মমতা

অরুপ রতন শীল
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:১৯ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ৮৩৬ বার।

বগুড়ার দরিদ্র শিক্ষার্থী মমতা খাতুন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজ English for Speakers of other Languages (ESOL) ভর্তি হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মমতা নিজেই।

মমতা জানান, প্রথমে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। পরে বিষয় মাইগ্রেশন করে ইসল( ESOL) বিষয়ে ভর্তি হয়েছি। থাকার জন্য বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল সুপারিশ করা হয়েছে। আসন পেলে শীঘ্রই হলে উঠবো। 

মমতা বলেন,  'ঢাবিতে ভর্তি হওয়া আমার স্বপ্ন ছিল যা এখন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। আমার এই স্বপ্ন পূরণে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি যেন সকলের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি এজন্য দোয়া চাই।' 

 

বগুড়া সদরের বেলগাড়ী গ্রামে মঞ্জুয়ারা বেগম ২০০২ সালের ১৫ মার্চ জন্ম দেন কন্যা সন্তান। মা স্নেহ ভালবাসায় নাম দেন মমতা। মমতাকে জন্ম দেয়াই মঞ্জুয়ারার জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার। যেন মহা অন্যায় করেছে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে। এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের পর জন্ম হয় মমতা'র। কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় পিতা রমিজ উদ্দিন রাগে ক্ষোভে কয়েকদিন পরেই তার প্রতিবন্ধী এক ছেলে, সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা মমতা ও স্ত্রীকে রেখে বড় দুই ছেলে-মেয়ে কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান অজানার উদ্দেশ্যে। একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিলেন রমিজ উদ্দিন।

 

স্বামী চলে যাওয়ায় প্রতিবন্ধী ছেলে ও সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মঞ্জুয়ারা। একেতো প্রতিবন্ধী ছেলে অপরদিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা। দারিদ্রতার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে এদের জীবন পার করতে হয়। বাবা ফেলে গেলেও কিন্তু জীবনের চাকা থেমে থাকেনি। কোলের সন্তান নিয়েই মঞ্জুয়ারা ঢালাই কারখানাতে কাজ শুরু করেন। যতটুকু উপার্জন করেন তাই নিয়ে দু-একবেলা খেয়ে-না খেয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে ও মমতাকে লালন-পালন করতে থাকেন। বড় হতে থাকে মমতা, পাঁচ বছর বয়সে ভর্তি করে দেন বেলগাড়ী ব্র্যাক স্কুলে, সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে প্রাথমিক লেভেলেও ফলাফল ভাল করেন।
 

ষষ্ঠ শ্রেণীতে ফাঁপোর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। দারিদ্রতার চরম পর্যায়ে থাকলেও মমতা সাহস হারাননি। অনেক কষ্টে মানুষের সহযোগিতা নিয়ে টাকা সংগ্রহ করে আদর্শ ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মমতা। তার পড়াশোনার আগ্রহ ও মনোযোগী দেখে কলেজের শিক্ষকেরাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেন মমতাকে।

কিছুদিন আগে তারা বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছে। তার আগে বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। কাঁচের বোতলে কেরোসিন তেল তুলে আলো জ্বালিয়ে পড়াশোনা করেছেন মমতা খাতুন। অবশেষে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন মমতা।

 

তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই লক্ষ্যে ফর্ম তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ভর্তি যুদ্ধে নেমে পড়েন মমতা, শেষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ঢাবিতে খ ইউনিটে মেধা তালিকায় ১০৪০তম অবস্থান করেন। ঢাবিতে ভর্তির জন্য মমতাকে  জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীবসহ অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব জানান, মমতা ঢাবিতে ভর্তি হয়েছে। তার পড়াশুনা সংক্রান্ত সকল ধরণের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ পাশে থাকবে।