আব্দুল মান্নান আকন্দের প্রার্থীতা বহাল, আপিল নাকচ
স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে করা আপিল নাকচ করে প্রার্থিতা বহালের আদেশ দিয়েছেন আপিল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার আপিল কর্তৃপক্ষের প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার( উন্নয়ন ও আইসিটি) এ, এন, এম মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশপত্রে বিষয়টি জানানো হয়।
আদেশপত্রে উল্লেখ করা হয়, আপীলকারী মো: মকবুল হোসেন এর আপীল নামঞ্জুর এবং আব্দুল মান্নানের মনোনয়ন পত্র দাখিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হলো।
এর আগে, আব্দুল মান্নান আকন্দের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে আপীল করেন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: মকবুল হোসেন।
আপীলকারী আবেদনে উল্লেখ করে বলেন, বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচননে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আব্দুল মান্নান এর মনোনয়ন পত্র রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু মোঃ আব্দুল মান্নান তার হলফনামার তথ্য গোপন করে দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, তার নামে বগুড়া জেলা স্পেশাল আদালতের স্পেশাল মামলা ০২/২০১৯ বিচারাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের ইনফরমেশন স্লিপ দাখিল করে বলেন, হলফনামার ২.খ অংশে ওই মামলা নম্বর উল্লেখ করেননি।
তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ অনুসারে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ক্ষেত্রে সবশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের রশিদের কপি দাখিল করার বিধান থাকলেও আব্দুল মান্নান সর্বশেষ ২০২২-২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্নের কপি দাখিল না করে ২০২১-২২ করবর্ষের আয়কর রিটার্নের কপি দাখিল করেছেন।
আপীলকারী আরও বলেন, আব্দুল মান্নানের শুকরা অনলাইন টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল যা হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেন । (খ) অংশ মতে ০৩ টি ফ্লাট আছে উল্লেখ করেছেন কিন্তু মূল্য ও অবস্থান উল্লেখ করেননি। একটি তিনতলা বাড়ি আছে কিছু অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেননি। ০২টি ছাত্রাবাস, ০৪টি দোকানঘর আছে কিন্তু তা করেন নাই।
আপীলকারী জানান, আব্দুল মান্নান একজন ঠিকাদার কিন্তু ঠিকাদারী লাইসেন্স স্যারেন্ডার করেন নাই। ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়েছেন কিন্তু কি কি ব্যবসা তা উল্লেখ করেন নাই। তিনি বলেন, আব্দুল মান্নান কর্তৃক রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের দোকানঘর হস্তান্তরের বিবরণ এবং তার স্ত্রীর নামে আমমোক্তার নামা রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
পরে আপীল কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপার, ব্যাংকের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিস্তারিত শোনেন।
শুনানী শেষে আপীল কর্তৃপক্ষ জানান, সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য, দাখিলীয় কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও নির্দেশিকা পর্যালোচনা করা হলো। সার্বিক পর্যালোচনায় , আপীলকারীর আপীল আবেদনে উল্লিখিত আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ সঠিক বিবেচিত না হওয়ার রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত হস্তক্ষেপযোগ্য নয় মর্মে গণ্য করা হলো। সবশেষে আপীলকারী মো: মকবুল হোসেন এর আপীল নামঞ্জুর এবং আব্দুল মান্নানের মনোনয়ন পত্র দাখিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হলো।
এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করার সময় রায়হান আলী নামে রেলওয়ের এক কর্মচারীকে মারধর করেন। এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, চুরি ও মারপিটের অভিযোগে আহত রায়হানের বাবা হায়দার আলী সরকার ওই মার্কেট নির্মাণের ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দকে প্রধান আসামী করে ৫১জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা( মামলা নং- ৮৯৪/২২) দায়ের করেন। সেই মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে জামিন নিতে বুধবার সকালে সদর আমলী আদালতে হাজির হন আব্দুল মান্নান আকন্দ। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতে আব্দুল মান্নান আকন্দের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে আব্দুল মান্নান আকন্দের পক্ষে আইনজীবী এড. রেজাউল করিম মন্টু অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন করেন। সেই আবেদনও নাকচ করে দেন আদালত।