নওগাঁর নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙ্গায় তাল পিঠার মেলায় উৎসবের আমেজ
নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় মৌমজার নাম ঘুঘুডাঙ্গা। নওগাঁ - মহাদেবপুর - ছাতড়া - শিবপুর সড়কের একটি সংযোগ সড়ক কাপাষ্টিয়া বাজার থেকে দক্ষিন দিকে চলে গেছে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত। এই সড়কে কাপাষ্টিয়া বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত কেবলই তালগাছ। সারি সারি তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আকাশপানে উঁকি মারছে। এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যপট সৃষ্টি হয়েছে।
ক্রমেই প্রকৃতি মানুষদের এখানকার সৌন্দর্য আকৃষ্ট করতে শুরু করে। প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ শিশু কিশোর আবালবৃদ্ধ বনিতা এই সৌন্দর্য উপভোগ কতে আসেন। ইতিমধ্যে তাল গাছের সৌন্দর্যমন্ডিত এই ঘুঘুডাঙ্গার সৌন্দর্যের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিকেল হলেই দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে ঘুঘুডাঙ্গার সবুজ চত্বর। কেবল নওগাঁ জেলা নয় দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও এখান তাল সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তেমনি শনিবার ফরিদপুর জেলা থেকে এসেছিলেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যাক্তি। ফেসবুকে দেখে তিনি এসেছিলেন। তিনি এখানকার ব্যতিক্রমী সৌন্দর্যে মুগ্ধ।
চারিদিকে ফসলের সবুজ বুক চিরে এঁকেবেঁক চলে গেছে ঘুঘুডাঙ্গার তাল সড়ক। অনেকদুর থেকেই সারি সারি তাল গাছের সৌন্দর্য। আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে ১৯৮৬ সালে এই তালগাছ গুলো রোপন করা হয়। বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সে সময়ের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাধন চন্দ্র মজুমদার এই তালগাছগুলো রোপন করেছিলেন। গাছগুলো এখন মহিরুহ।
এই সৌন্দর্য স্থিতীশীল করতে মানুষের চাহিদার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হচ্ছে তালপিঠামেলা।
তারই ধারাবাহকিতায় ২৪ সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হয় তৃতীবারের মত পিঠামেলার। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। এ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান, পুলিশ সুপার মো: রাশিদুল হক, চ্যানেল আই-এর বার্তা প্রধান কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মেলায় শতাধিক ষ্টলে তালের তৈরী বিভিন্ন রকমের পিঠা প্রদর্শিত হচ্ছে। তিনদিনব্যপী আয়োজিত এ মেলায় হাজারও মানুষের সমাগম ঘটেছে। যেখানে এ অঞ্চলের বহু মানুষের সমাগম ঘটে। আগতরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারেন বাহারি তাল পিঠারও।
এ বছর তালের পাটিসাপটা, তালে জিলাপি, তালের বড়া, তালের ঘীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২০ ধরনের পিঠা মিলছে মেলায়। এখানে হরেক রকমের তাল পিঠার পশরা সজিয়ে বসেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দোকানীরা।
নওগাঁ সাপাহার উপজেলা থেকে আসা মীনা পিঠা ঘরের মালিক মীনা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্নরকম তালের পিঠা দিয়ে দোকান সাজানো হয়েছে। এবারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের সব ধরনের পিঠাই থাকছে আয়োজনে। প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা অনেকটাই বেশি হচ্ছে। মেলাকে ঘিরে নওগাঁ ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলা থেকে দোকানিরা এসেছেন। তিন দিনের এ তাল পিঠার মেলায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়। জেলার বাইরে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসেন এখানে।
মেলায় ঘুরে আসা জয়পুরহাটের সুমাইয়া আক্তার বলেন, ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়কের ছবি ফেসবুকে অনেক দেখেছি। এবার সরাসরি দেখার জন্য পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছি। তাল গাছের এমন লম্বা সারির মনোরম দৃশ্য সত্যি আমাদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি মেলাতে বিভিন্ন প্রজাতির তালের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম। তালের যে এত রকম পিঠা হয় এর আগে জানা ছিল না। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিনে বর্নিল এ আয়োজন বসানো হয়। মেলাকে উপলক্ষ করে বাড়িতে বাড়িতে জামই-মেয়ে আর স্বজনরা বেড়াতে আসেন। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন প্রজাতির গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দিতেই এমন আয়োজন। একটা সময় আমি থাকবো না, তবে এমন আয়োজন যুগের পর যুগ থাকবে এমটাই আশা আমার।