নওগাঁয় শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষা অফিসার পদকে বিতর্কিত অফিসারকে সুপারিশ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৪২ ।
প্রতিবেশী জেলা
পঠিত হয়েছে ২৩ বার।

নওগাঁ জেলায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২২ তালিকায় বিতর্কিত অফিসারের নাম সুপারিশের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে। বিতর্কিত ওই অফিসার সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত আবদুল আমিন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজিসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্বেও শ্রেষ্ঠ পদকে এই কর্মকর্তার নাম সুপারিশ করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুনঃ যাচাই বাছাই করে যোগ্য অফিসারকে এই পদকে সুপারিশের দাবী সুধীজনদের।


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদান করা হয়ে থাকে। একটি নীতিমালার আলোকে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক/শিক্ষিকা, বিদ্যালয়, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশেষ অবদান রাখার দিক বিবেচনা করে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়। ২০১৩ সালে এই পদক নীতিমালায় লিপিবদ্ধ হওয়ার পর ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২১ সালে সংশোধন করা হয়। দেশের প্রতিটা জেলায় শ্রেষ্ঠ নির্বাচিতদের প্রতি বছর শিক্ষা পদক প্রদান করে আসছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আমিন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানাবিধ অপকর্মে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে আসা বরাদ্দের প্রতিটা খাত থেকেই উৎকোচ নিতে শুরু করেন তিনি। গত ২৪ এপ্রিল আব্দুল আমিন এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন সদর উপজেলার মঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমান। তাৎক্ষণিক অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন জেলা প্রশাসক। তবে  অভিযোগের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও অজানা কারণে এখনো সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি। শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা থাকার সুবাদে আব্দুল আমিনের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের তদন্ত পিছিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে চলতি বছর জেলায় জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক দিতে শ্রেষ্ঠ তালিকায় উপজেলা যাচাই বাঁছাই কমিটি আব্দুল আমিনের নাম সুপারিশ করেছে। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সখ্যতার কারণে যাচাই বাছাই কমিটির সামনে তার দোষগুলো তুলে ধরা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রেষ্ঠ ঘোষণার আগেই তার নাম সুপারিশের খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।


মঙ্গলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, আব্দুল আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার পর থেকেই আমাকে শোকজসহ স্কুলে এসে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সখ্যতার সুবাদে তিনি সকল স্কুল থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করেন। প্রতিটা স্কুল থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেন। এছাড়াও তিনি বদলী ব্যবসা করেন। এই ধরনের বিতর্কিত কর্মকর্তা কোনভাবেই পদকে ভূষিত হতে পারেন না। সুপারিশের তালিকা থেকে বিতর্কিত এই কর্মকর্তার নাম বাদ দেয়ার পাশাপাশি তার অনিয়ম ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।


এবিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল আমিন বলেন, শ্রেষ্ঠ পদকের তালিকায় আমার নাম আছে এমন কথা আমিও শুনেছি। তবে বিষয়টি অফিস থেকে এখনো আমাকে জানানো হয়নি। কর্তৃপক্ষ আমার যোগ্যতা দেখেই আমাকে পদক দিবেন। বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে চাঁদা আদায়ে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সঠিক নয়।


জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক নওগাঁ সদর উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভিন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আব্দুল আমিনের চলতি বছরের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিলো বলেই তার নাম সুপারিশ করে জেলা যাচাই বাছাই কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে এমন বিষয় আমার জানা ছিলো না।


জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক নওগাঁ জেলা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি নিয়ে আবদুল আমিনের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করার বিষয়টি আমি অবগত নয়। কেউ এমন অভিযোগ করে থাকলে সেটি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


তিনি বলেন, উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে নামটি আমাদের কাছে এসেছে। এখনো কাওকে চূড়ান্ত করা হয়নি। যাচাই বাছাই চলমান রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন এমন যোগ্যদেরকে মূল্যায়ন করেই পদক দেয়া হবে। শীঘ্রই তালিকাটি প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।