বগুড়ার শেরপুরে ‘সবজি চারা গ্রামে’র মানুষের মুখে হাসি নেই!

শেরপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩৮ ।
বিশেষ
পঠিত হয়েছে ২৩ বার।

সবজি উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ার সুনাম অনেক পুরনো। শীতকাল সারা বছর এখানকার মাঠ নানান জাতের সবজিতে ভরপুর থাকে। বিশেষ করে শেরপুরের চাষীরা বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদনে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে প্রতিকুল আবহাওয়া এই উপজেলার চাষীদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপুল পরিমান জমিতে চারা তৈরি করলেও ক্রেতার অভাবে জমিতেই পড়ে রয়েছে চারাগুলো। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চারা উৎপাদনকারীরা ।  

 

শেরপুরের সীমাবড়ী ইউনিয়নের বৈটখর ও গাড়ীদহ ইউনিয়নের রানীনগর এলাকাটি সবজি চারা গ্রাম নামে পরিচিত। উপজেলার এই দুটি গ্রামের চাষীরা প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি টাকার সবজি চারা বিক্রি করে  থাকেন। এই এলাকার শীতকালীন সবজির চারার চাহিদা রযেছে ব্যাপক। বিভিন্ন জাতের বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি চারা বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ, তেঁতুলিয়া, ঠাকুরগাও কুড়িগ্রাম, নাটোর, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাষীরা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে করে  থাকেন। শীতকালেই শুধু নয়, সারা বছর সবজির চারার চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন এখানকার চাষীরা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, এই দুইটি গ্রামে আগাম শীতকালীন সবজির বাজার দখল করতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে মোড়ানোসহ বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যেমে বীজ রোপন করে উপযুক্ত চারা তৈরী করেছেন। অর্ধেক চারা বিক্রি হলেও কয়েক দিনের ভারী বর্ষনের ফলে চাষীরা সবজি চারা রোপণের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে অনেক চারা জমিতেই পড়ে রয়েছে।

 

উপজেলার রানীনগর গ্রামের চাষী শরিফ উদ্দিন মিন্টু জানান, তিনি জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে জমি প্রস্তুতি শুরু করেন। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। নিজস্ব প্রযুক্তি, পরিচর্যা, সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগে এ চারা তৈরী করেছেন। এ চারা ৫ মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এই ৫ মাসে তিন থেকে চার বার চারা তৈরী করা যায়। বর্তমানে আগাম সবজি চাষের চারা তৈরী হয়েছে। শীতে সবজির বাজার দখল করতে চাষীরা ব্যস্ত সয়ম পার করছেন বলেও তিনি জানান।

 

আরেক চারা উৎপাদনকারী রোহান জানান, এক কেজি বীজে প্রায় ১লক্ষ চারা তৈরী হয়। এর মাঝে আনুমানিক ১০ হাজার নষ্ট হয়। প্রতি হাজার টমেটো চারা গত মৌসুমে বিক্রি হয়েছে ২৬’শ থেকে ৩ হাজার টাকায়। এবার এখনো ফুল মৌসুম শুরু হয়নি, এজন্য বিক্রি হচ্ছে কম দামে। মৌসুমের সময় চারার দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মরিচ, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপির চারার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেশি বলে তিনি জানান।

 

নীলফামারী থেকে চারা নিতে আসা কবির হোসেন জানান, ‘এখানে বিজলী মরিচ ও লিডার কপি এবং টমেটোর চারা খুব ভালো। তাই আমরা এখান থেকে প্রতি বছর চারা সংগ্রহ করে প্যাকেট করে নিয়ে যায়। আগাম সবজি বাজারে তুলতে চারা সংগ্রহ করছি। এবার বসকিছুর দাম বৃদ্ধি হওয়াতে চারার দামও বেড়ে গেছে।’

 

শেরপুর উপজলো কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার জানান, এ বছর উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে বীজ চারা তৈরী হয়েছে। উপজেলায় রবি মৌসুমে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষাবাদ চলমান রয়েছে। বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন তিনি।