নওগাঁর নিয়ামতপুরে ইউএনওর সমন্বয়হীনতায় মাসিক মিটিং বর্জন করলো ইউপি চেয়ারম্যানগণ

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার আট ইউনিয়ন পরিষদের  (ইউপি) চেয়ারম্যান মঙ্গলবার উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভা বর্জন করেছেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক সুফিয়ানের সমন্বয়হীনতায় ক্ষুব্দ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা সভা বর্জন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সকাল ১১ টায় ইউএনও ফারুক সুফিয়ানের সভাপতিত্বে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা ও দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।  এই দুই সভায় উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের কোনো চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন না। 

সভায় অন্যদের মধ্যে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, 'আজকে উপজেলার ৪১তম  মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা ছিল। এই দুই সভায় ইউপি চেয়ারম্যানরা সদস্য হলেও উপজেলার আটটি ইউনিয়নের কোনো চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানলাম, 'ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউএনওর বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতার অভাব তুলে তাঁরা আজকের সভায় উপস্থিত হননি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে এলে তার পরামর্শে  ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হবে।'

নিয়ামতপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নঈম, ভাবিচা ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক সহ চার-পাঁচজন ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ইউএনও ফারুক সুফিয়ানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয়ীনতার কারণে উপজেলায় সকল ধরনের উন্নয়নমূলক ও জাতীয় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপজেলার সকল চেয়ারম্যানরা ইউএনওর বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছেন। এরপরেও ইউএনও তাঁর একঘেয়েমি আচরণ পরিহার করেননি। উপজেলার কোনো উন্নয়নমূলক কাজে ইউএনও তাদের সাথে কোনো সমন্বয় করেন না। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা বর্তমান ইউএনওর সভাপতিত্বে কোনো সভায় উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

উপজেলার ভাবিচা ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক চেয়ারম্যানদের সঙ্গে ইউএনও ফারুক সুফিয়ানের সমন্বয়হীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে  বলেন, 'সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে এই ইউএনও তাদের সাথে কোনো সমন্বয় করেন না। দেশের প্রায় সব উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয় সরকারের ৪০ দিনের কর্মসূচি চলছে। কিন্তু এই ইউএনওর সমন্বয়হীনতার কারণে নিয়ামতপুরে এখনো এই কর্মসূচি চালু করা যায়নি। চেয়ারম্যানরা কর্মসূচি চালু করার জন্য ইউএনওকে বার বার বলা সত্ত্বেও তা চালু হয়নি। এছাড়াও চেয়ারম্যানরা তাদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ইভটিজিং ও মাদক নিয়ন্ত্রণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বললে তিনি কোনো কর্ণপাত করেন না। উলটো তিনি চেয়ারম্যানদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তাই ইউপি চেয়ারম্যানরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান ইউএনওর সভাপতিত্বে কোনো সভায় উপস্থিত হবেন না। এই ইউএনও অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো সভায় উপস্থিত হবেন না।'

ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রশাসনের সভা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফারুক সুফিয়ান দাবি করেন,'চেয়ারম্যানদের সাথে তার সমন্বয়ের কোনো সমস্যা নেই। শীত অথবা বিশেষ কোনো কারণ হয়তো আজকে তারা সভায় উপস্থিত হয়নি। উপজেলার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে।