বগুড়ায় উপ-নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও ভোটারদের আগ্রহ কম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ ১৯:১৫ ।
দেশের খবর
পঠিত হয়েছে ৩১ বার।

বগুড়ার দু’টি আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে ১ ফেব্রুয়ারি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সবগুলো কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। এজন্য ৩১ জানুয়ারি দুপুর থেকে শহরের পৌর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইভিএমসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা, পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা টহল দিবেন। সব ধরনের অনিয়ম রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট গ্রহণের সুবিধার্তে আজ বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।

 


সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনের বিএনপি দলীয় ২ সংসদ সদস্য গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। শূন্য ওই আসন দু’টিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এবং জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২০জন প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। রিটার্নিং কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া-৪ আসনে মোট ৯জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। ওই আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯জন। বগুড়া-৬ আসনে রয়েছেন ৪ লাখ  ১০ হাজার ৭৪৩জন।
তবে যাদের জন্য এত আয়োজন সেই ভোটারদেরই এবারের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ কম। সাধারণ ভোটার এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত ওই দু’টি আসনে এবার দলটি নির্বাচন বর্জন করায় বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক ভোট কেন্দ্রে আসতে রাজি নন। 

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’টি আসনের মধ্যে বগুড়া-৬ (সদর) আসন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিও ছড়িয়ে পড়েছে। ‘নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে আসার দরকার নেই’ বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি শাসক দলের প্রার্থী ছাড়া প্রতিদ্ব›দ্বী অন্যরা ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করায় ভোটারদের মধ্যে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার কারণেই তারা ভোট কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই আসনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হলেও ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে তা প্রায় অর্ধেকে (৩৫ শতাংশ) নেমে আসে।

 


সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন জানিয়েছেন, বগুড়ার উপ-নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের কোন আগ্রহ নেই। কারণ নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা নৌকার ভোটার ছাড়া অন্যদের ভোট কেন্দ্রে না আসার জন্য বক্তব্য দেওয়ার পরের নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে মানুষ ভোট কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে ভোটার উপস্থিতি এবার অস্বাভাবিক কমতে পারে।

 


নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বগুড়ার দু’টি আসনের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তথ্য অনুযায়ী মোট ২৫৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ বা ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন র‌্যাবের ১৭টি পেট্রোল টিম এবং ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী অনিয়ম রুখতে ৩৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আরও ৩জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

আসনগুলোতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন যারা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া-৪ আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী ৯ প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের (মাশাল) সঙ্গে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল) এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোশফিকুর রহমান কাজলের (ট্রাক) মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হতে পারে। নন্দীগ্রামে কর্মরত সাংবাদিক অদ্বৈত কুমার আকাশ জানান, এমনিতেই ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। তারপরেও যারা ভোট দেওয়ার মনস্থির করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই তিন প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হতে পারে।
বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী ১১ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত রাগেবুল আহসান রিপুর (নৌকা) সঙ্গে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক) এবং সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদলের (কুড়াল) প্রতিদ্ব›দ্বীতা হতে পরে বলে আভাস মিলেছে। প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগরা জানিয়েছেন, শুরুর দিকে নৌকা ও ট্রাকের  মধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বীতার কথা শোনা গেলেও পরবর্তীতে সাবেক বিএনপি নেতা সরকার বাদল তার অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী করতে পেরেছে। ফলে মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা ওই তিন প্রার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।


রিটার্নিং কর্মকর্তা বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনে তারা সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চান। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’